ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে শেষ আটে পিএসজি

বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগে ২-০ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই। করোনাভাইরাসের কারনে দর্শকশুন্য মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হলেও ম্যাচ শেষে পার্ক ডি প্রিন্সেসের বাইরে জড়ো হওয়া হাজার হাজার স্বাগতিক সমর্থকদের সাথে জয়ের উৎসব ভাগাভাগি করে নিয়েছে নেইমার, এমবাপ্পেরা। গত মাসে প্রথম লেগে জার্মানীতে ২-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল পিএসজি। কালকের ম্যাচে ২৮ মিনিটে নেইমারের গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। এরপর পাবলো সারাবিয়ার এসিস্টে হুয়ান বারনাট বিরতির ঠিক আগে পিএসজির জয় নিশ্চিত করেন। কিলিয়ান এমবাপ্পে বদলী হিসেবে ৬৪ মিনিটে সারাবিয়ার স্থানে খেলতে নেমেছিলেন। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম শেষ আটে জায়গা করে নিল প্যারিসের জায়ান্টরা। ৮৯ মিনিটে জার্মান মিডফিল্ডার এমরে কান লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে গেলে বাকি সময়টা ১০জন নিয়ে খেলতে হয়েছে ডর্টমুন্ডকে।

করোনাভাইরাসের কারনে ফ্রান্সে ১ হাজারেরও বেশী মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় ফরাসি সরকার বড় ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তা সত্বেও মাঠে উপস্থিত থাকার আক্ষেপ থেকে বেরিয়ে এসে মাঠের বাইরে ঠিকই জড়ো হয়েছিলো পিএসজি সমর্থকরা। ম্যাচ শুরুর আগে টিম বাস স্টেডিয়ামে আসার সাথে সাথে সমর্থকদের উষ্ণ অভিনন্দন পেয়েছে। পুরো ম্যাচে তারা মাঠের বাইরে থেকে গান গেয়ে, উল্লাস করে প্রিয় দলকে সমর্থন যুগিয়েছে। পিএসজি কোচ থমাস টাচেল ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমরা একটি দল হিসেবে খেলেছি। তাদের কোচ হিসেবে আজ মাঠে থাকতে পারাটা সত্যিই গৌরবের। এখানে আসার পর থেকেই একটি অন্য অনুভূতি সকলের মধ্যে কাজ করেছে। বিশেষ করে বাইরে থেকে সমর্থকদের উল্লাস যেন আমরা মাঠের ভিতরেও শুনতে পাচ্ছিলাম। ম্যাচ শেষে আমরা তাদের সাথে মিলিত হয়ে উল্লাস করেছি। সমর্থকদের ছাড়া মাঠে খেলাটা সত্যিই কঠিন।’ম্যাচ শেষে নেইমারকে কাঁদতে দেখা গেছে, গত দুই বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির ব্যর্থতার পিছনে কিছুটা হলেও বিশ্বের সবচেয়ে দামী এই খেলোয়াড়কেই দায়ী করা হয়েছে। ইনজুরির কারনে ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ও গত বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে পারেননি নেইমার। দুই আসরেই নক আউট পর্বের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল পিএসজি।

প্রথম লেগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ডর্টমুন্ডের নরওয়েজিয়ান ১৯ বছর বয়সী এ্যাটাকার আর্লিং ব্রট হালান্ডকে কাল পুরো ম্যাচে কার্যত খুঁজেই পাওয়া যায়নি। প্রথম লেগে দুটি গোলই করেছিলেন হালান্ড। অবশ্য দলীয় ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস স্বীকার করেছেন তার দল পুরো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি। এ সম্পর্কে হামেলস বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই অস্বস্তিকর ছিল। যদিও এটা দুই দলের জন্যই প্রযোজ্য। ম্যাচের শুরুটাই কেমন জানি ছিল, মনে হয়েছে কোন প্রীতি ম্যাচ খেলতে নেমেছি।’অসুস্থতার কারনে কাল মূল একাদশে ছিলেন না এমবাপ্পে। এমনকি গতকাল তাকে করোনাভাইরাস পরীক্ষাও করাতে হয়েছে, যদিও পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। নিষেধাজ্ঞায় থাকা মার্কো ভেরাত্তি ও ইনজুরি আক্রান্ত সেন্টার-ব্যাক থিয়াগোর সিলভার সাথে এমবাপ্পের অনুপস্থিতিতে মূল একাদশ গঠনে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন টাচেল। যে কারনে এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে এডিনসন কাভানি ও পাবলো সারাবিয়াকে খেলতে হয়েছে। অন্যদিকে মিডফিল্ডার হিসেবে দলে ছিলেন আর্জেন্টাইন লিওনার্দো পারেদেস।

২৫ মিনিটে কাভানির শট ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক রোমান বুরকি কোনমতে রক্ষা করেন। এর তিন মিনিট পরেই প্রথম গোলের দেখা পায় স্বাগতিকরা। এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার ক্রস থেকে নেইমারের হেডে এগিয়ে যায় পিএসজি। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে ডি মারিয়ার থেকে বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে যান সারাবিয়া। তার বাড়ানো লো বলেই বারনাট দলের ব্যবধান দ্বিগুন করেন। প্রতিপক্ষ একটি গোল দিতে পারলেই ম্যাচটি হয়ত অতিরিক্ত সময়ে গড়াতো। কিন্তু পুরো ম্যাচে ডর্টমুন্ডের খেলোয়াড়রা খুব কমই পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে পরীক্ষায় ফেলতে পেরেছেন। নেইমারকে ফাউলের অপরাধে ৮৯ মিনিটে কানকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান ইংলিশ রেফারি এন্থনি টেইলর। এই ঘটনায় একইসাথে নেইমার ও ডি মারিয়াকেও হলুদ কার্ড দিয়ে সতর্ক করেছেন রেফারি। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান