ডিএসসিসি’র সড়কে ইঞ্জিনচালিত রিক্সা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ, সড়কে পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এলাকাভুক্ত সড়কগুলোতে আজ রোববার থেকে ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান চলাচল করতে পারবে না। এছাড়াও অযান্ত্রিক যেসব যানবাহনে ‘মোটর-ব্যাটারি-ইঞ্জিন’ সংযোজনের মাধ্যমে যান্ত্রিক বানানো হয়েছে, সেসব যানবাহনও ডিএসসিসি-ভুক্ত সকল সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইঞ্জিনচালিত রিক্সা-ভ্যান,বা এধরনের যে-কোনো যানবাহন সড়কে চলাচল করতে দেখলে অথবা সড়কের ওপর পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডিএসসিসি’র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস রোবাবার সকালে রাজধানীর ফুলবাড়িয়াস্থ ‘নগরভবন’ প্রাঙ্গণে রিক্সা, ভ্যান, ঠেলা গাড়ি, টালি-গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ির নিবন্ধন, নবায়ন ও এসব যানবাহনের মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এসব কথা জানান।

তিনি এসময় সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ারি জানিয়ে উল্লেখ করেন, অযান্ত্রিক যানবাহন হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে,তাতে ব্যাটারি-চালিত ইঞ্জিন লাগিয়ে রাস্তায় চালানোর চেষ্টা এখন থেকে আর করবেন না। শেখ ফজলে নূর তাপস এ ধরনের যাবাহন ডিএসসিসি’র অধীন সকল সড়ক থেকে আপসারণের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অনেক কবি-সাহিত্যিক তাঁদের লেখনীতে ঢাকা শহরকে ‘সিটি অফ রিক্সা বা রিক্সার নগরী’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন এ কথা উল্লেখ করে ডিএসসিসি’র মেয়র বলেন,‘এটা আমাদের ঐতিহ্য। শত বছরের এই ঐতিহ্য আমরা ধরে রাখতে চাই। সেজন্যই রিক্সাসহ ধীর-গতির যেসব অযান্ত্রিক যানবাহন রয়েছে,সেগুলো নতুন করে আমরা নিবন্ধন ও নবায়নের আওতায় আনছি। এর মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এখন থেকে নিবন্ধিত অযান্ত্রিক যানবাহন ছাড়া অন্য-কোন ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন ঢাকা শহরে চলাচল করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে,ডিএসসিসি-এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের কার্যকারিতা নিরুপণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে, কোন সড়কে ধীর-গতির যানবাহন চলবে, আবার অন্যকোন সড়ক দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে যা-কিছু করার তা আমরাই নির্ণয় করব। এই নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধীর-গতির যানবাহন যেমন নিবন্ধনের আওতায় আসবে, তেমনি নিয়মের মধ্যদিয়ে সড়কগুলোতে শৃঙ্খলাও ফিরে আসবে।’

তিনি জানান, এটা শুধু নিবন্ধন কার্যক্রম নয়, এ কার্যক্রম তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত সচল ঢাকা গড়ার পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। ডিএসসিসি’র মেয়র বলেন,‘যানবাহনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে তাদের জন্য চলাচলের রাস্তা নির্ধারণ করে দেবো এবং চালকদেরকেও আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনব। এর ফলে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে যাতায়াত ব্যবস্থার আওতায় আসবে।’

রিক্সাসহ অযান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন প্রদানের মধ্যদিয়ে রাজধানীর যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কী? না, নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে -সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার তাপস বলেন,‘আমার নির্বাচনী ইশতেহারে সচল ঢাকা গড়ার যে রূপরেখা আমি দিয়েছি, তাতে যেমন দ্রুতগতির যানবাহন থাকার বিষয়টি রয়েছে,তেমনি ধীর গতির অযান্ত্রিক যানবাহনও থাকবে বলেও জানিয়েছি।’

ডিএসসিসি’র মেয়র এসময় জানান, ঢাকা শহরে দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় থেকে রিক্সা ও অযান্ত্রিক যানবাহনের কোন নিবন্ধন প্রদান করা হয়নি। সেজন্য ঢাকায় কী রিকশা চলে না? বাস্তবতা হলো, রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকায় রিকশা অতীতেও চলেছে,এখনো চলে। কিন্তু যেগুলো চলছে, সেগুলো সবই অবৈধ-পন্থায় চলে।

তিনি বলেন,‘নিবন্ধনের আওতায় আনা মানে অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা। আমরা চলমান এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্সা-ভ্যান তথা অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিবন্ধন প্রদান করবো।’ তবে সে-সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি।

এ অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ডিএসসিসি’র পক্ষে মেয়র তাপস একটি ঘোড়ার গাড়ি ও একটি রিকশার আবেদনপত্র সংগ্রহ করেন।

ডিএসসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঞ্চালনায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মোঃ বদরুল আমিন, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) শরীফ আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, ডিএসসিসি’র সচিব আকরামুজ্জামান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, আজ দুপুরে ডিএসসিসি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হযেছে, ডিএসসিসি’র আওতাধীন এলাকায় অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন, নবায়ন, মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কর্পোরেশন ইতোমধ্যে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে।

আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আজ রোববার থেকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর-২০২০ পর্যন্ত নগর ভবনের ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগ এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অফিস চলাকালীন সময়ে নিবন্ধন,নবায়ন,মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ১০০ টাকার (অফেরতযোগ্য) বিনিময়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন।

গৃহীত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে যোগ্য বিবেচিত আবেদনগুলোর অনুকূলে নির্ধারিত ফি জমাদান সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হবে। প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আজ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোটরচালিত, যন্ত্রচালিত, ইঞ্জিনচালিত, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষিত। এ ধরনের যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান করা হবে না। সেগুলো রাস্তায় চলাচল অবৈধ। তাই, রাস্তায় এসব যাবাহন পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান