ডিলিস্টিং সমাধান নয়, যুগোপযোগী আইন দরকার

শুরুতেই স্ট্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে ডিএসই’র ব্রোকারদেরকে চীনা কোম্পানির টাকা দেয়ার বিষয়টা নিয়ে বলবো, আশা করছি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে টাকাটা আমরা পেয়ে যাবো। ডিএসই ব্রোকারদের যে শেয়ারটা আমরা ২১ টাকা করে বিক্রি করলাম সেই টাকাটা, প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। প্রক্রিয়াগত কিছু সমস্যার কারণে এটা পেতে একটু দেরি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এমনকি তাদের দিক থেকে ক্লিয়ারেন্স এসব প্রক্রিয়ায় একটু দেরি হলো, আবার এর মধ্যে ঈদুল আযহার একটা বড় ছুটি গেল। সব মিলিয়েই একটু দেরি হলো। এখন সবই হয়ে গেছে, খুব তাড়াতাড়ি আমরা টাকাটা পেয়ে যাবো আশা করছি। আর তারপরেই আমাদের শেয়ারটা ট্রান্সফার করার মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের বোর্ডে বসবে। এব্যাপারে কোথাও কোনো বাধা নেই, শুধু প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হতে যতটা সময় লাগা দরকার ততোটা লাগছে।

এই টাকাগুলো পেলে মার্কেটে কী প্রভাব পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে আমি বলবো, আপনারা জানেন এই টাকা কিন্তু ডিএসই’র টাকা নয়, এটা ব্রোকারদের টাকা। আর বেশিরভাগ ব্রোকারেরই প্রধান ব্যবসা তার ব্রোকারেজ হাউজটাকে পরিচালনা করা। তাই আমি মনে করি, এই টাকার শিংহভাগ অংশই বাজারে বিনিয়োগ হবে। আপনি দেখে থাকবেন, বাজারে এখন অনেক শেয়ারের দর এমন অবস্থানে এসেছে যে বিনিয়োগের এখনই উৎকৃষ্ট সময়। আমার মনে হয় যে, আমরা টাকাটা পেলে কিছু অন্য প্রয়োজন তো সবারই থাকে, এর বাইরে সবাই বেশিরভাগ টাকাটাই শেয়ারে বিনিয়োগ করবে। ফলে একটা পজিটিভ প্রভাবতো অবশ্যই পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যেদিন থেকে চায়না কোম্পানির প্রতিনিধি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে বসছে, সবাই আমরা জানতে পারছি, সেদিন থেকে এর ইমেজ হচ্ছে এটা একটা মাল্টি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ। পরিস্থিতি তখন অনেক বদলে যাবে, অনেক গতিশীল হবে বলে আমি মনে করি। তাছাড়া তাদের সাথে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী তারা  প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে এবং নতুন নতুন প্রডাক্ট আনার জন্য আমাদের যে প্লান দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করার জন্য তারা আসলেই কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই সথে আমাদের কমিশনও সহায়তা করবে, এতে আসলেই বাজার বড় হবে। বিশ্বমানের বিনিয়োগকারীরা এখানে আসার রাস্তা তৈরি হবে বলে আমি মনে করি।

সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি কোম্পানিকে ডিলিস্টিং করেছে, আরো বেশ কিছু কোম্পানিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে, এই বিষয়টা নিয়ে আমি বলবো, আসলে আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের মূল কাজই কিন্তু লিস্টিং এবং ডিলিস্টিং। ডিলিস্টিং এর ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো ছিল, তার ভেতর একটা শর্ত হচ্ছে, কোনো কোম্পানি যদি বিগত পাচ বছর উৎপাদনে না থাকে, তবে ডিএসই তাকে ডিলিস্টিং করতে পারে। সম্প্রতি যে দুটি কোম্পানিকে ডিলিস্টিং করা হয়েছে, আমার জানা মতে, তাদেরকে ডিএসই অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কয়েকবার জানতে চেয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, আপাতত তাদের উৎপাদনে যাওয়ার কোনো আগ্রহ নেই। যে কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছর উৎপাদনে থাকে না এবং অদূর ভবিষ্যতেও উৎপাদনে আসার আগ্রহ নেই, সে কোম্পানিকে লিস্টিং রেগুলেশন্স অনুযায়ী ডিএসই ডিলিস্টিং করতেই পারে এবং প্রক্রিয়াগতভাবে সেটা করেছে, এটা একটা দিক। কিন্তু ডিলিস্টিং কি আসলেই কোনো সমাধান? আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, ডিলিস্টিং কোনো সমাধান নয়।

একটা কোম্পানিকে যখন ডিলিস্টিং করা হলো তখন ওই কোম্পানির যারা উদ্যোক্তা বা এখন যারা পরিচালক তাদের কি হলো? তাদের তো কিছু হলো না। তারা এ কোম্পানি না চালালেও অন্য ব্যবসা করবে। এতে তাদেরতো কোনো সমস্যা নেই। তারা তো ঠিকই যখন টাকা নেয়ার দরকার তখন টাকা নিয়েছে। তাদের ঠিকই চলছে। চলছে না আমাদের বিনিয়োগকারীদের সংসার। যারা এই কোম্পানীতে বিনিয়োগ করেছে, বিনিয়োগ করেছে কোথায়, আমাদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে, আমরা কোম্পানিগুলোকে মার্কেটে রেখেছি, মানে আমরা বলেছি যে তুমি এই শেয়ার কিনতে পার। তাদেরকে আমরা ডেকে এনেছি। এখন ডিলিস্টিংএর ফলে তারা কোথায় যাবে? কোম্পানিতে তাদের যাওয়ার সুযোগ অতীতেও দেয়নি এখনো নেই আর ভবিষ্যতেও দেবেনা। তাহলে তাদের জন্য কী করা যায়। আমি মনে করি তাদের জন্য একটাই সুযোগ আছে, যুগান্তকারী এবং যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা। এসমস্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের শ্বাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাজারে লিস্টিং করে বিনিয়োগকারীর টাকা নিয়ে চলে যবে, স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং ফি না দিয়ে চলে যাবে। সেটা হবে না। এই জন্য আইন দরকার। যেমন ব্যাংক থেকে টাকা নিলে সে টাকা ফেরৎ দিতেই হয়। একই রকমভাবে শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিলে তাও কোন না কোনোভাবে ফেরৎ দিতে হবে। আপনি জাননে কিনা, অনেক কোম্পানি কিন্তু ইচ্ছা করেও তাদেরকে ডিলিস্টিং করেছে।

নতুন আইন হতে পারে যে ডিলিস্টিং করার আগে কোম্পানিকে লিকুইডিশন করা হলো। এতে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের যতটুকু সম্ভব ক্ষতি পূরন দেয়া যেতে পারে। এই কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকেরা অন্য ব্যবসা করার জন্য কোন লোন পাবে না। এ ধরনের কোনো না কোনো ব্যবস্থা রাখতে হবে।

মো. সাজেদুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
পরিচালক, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।