ঢাবি ও বিএসএমএমইউ’র যৌথ নেতৃত্বে উদ্ভাবন হলো কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নেগেটিভ প্রেসার ক্যানোপি

সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর যৌথ নেতৃত্বে নেগেটিভ প্রেশার আইসোলেশন ক্যানোপি’ উদ্ভাবন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন ও বর্তমানে অনারারি অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানীর নেতৃত্বে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত একটি গবেষণাদল সম্পূর্ণ নিজস্ব ডিজাইনে এই ‘নেগেটিভ প্রেশার আইসোলেশন ক্যানোপি’ তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনসেথেসিয়া, এনালজেসিয়া এবং ইনটেনিসভ কেয়ার মেডিসিনের প্রধান অধ্যাপক এ কে এম আখতারুজ্জামানের পরামর্শ নিয়ে অধ্যাপক রব্বানীর ডিজাইনে প্রথম কার্যকরী প্রোটোটাইপটির মূল উন্নয়ন ও তৈরির কাজ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এটি বিএসএমএমইউতে প্রদর্শিত হয়েছে।

এ গবেষণা দলে আরও রয়েছেন, সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সাইন্স প্রোগ্রামের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের একটি প্রজেক্টে নিয়োজিত গবেষকবৃন্দ, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের শিক্ষক প্রকৌশলী রাকিব সাখাওয়াত হোসেন এবং অংশীদারবিহীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ‘বাইবিট লিমিটেড’ এর গবেষক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান। শনিবার বিএসএমএমইউ’র ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, কোভিড-১৯ এর মত সংক্রামক রোগীদের থেকে নির্গত জীবানু হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিরাট ঝুঁকি। রোগীর চারদিক ঘিরে রেখে বাতাস টেনে নিয়ে নেগেটিভ প্রেশার তৈরি করে এ ঝুঁকি কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে, যার কোনটি কেবলমাত্র রোগীর মাথাকে ঢেকে রাখে, কোনটি রোগীর শরীরের অর্ধেক ঢেকে রাখে, কোনটি রোগীর বিছানার আশেপাশে বেশ কিছু জায়গা ঘিরে তাবুর মত তৈরি করে, কোনটি পুরো ঘর থেকেই বাতাস টেনে নেয়। তবে শেষের দু’টি ব্যবস্থায় রোগীকে সেবা দেওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি থেকেই যায়। আবার রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে আনা নেয়ার জন্য স্ট্রেচারের উপরও এ ধরণের ব্যবস্থা করা হয়। বিদেশ থেকে আসা এসব যন্ত্রপাতি ব্যয়বহুল এবং অনেক সময়েই মেরামতযোগ্য নয়। কিন্তু তাদের তৈরি ক্যানোপিটি কেবলমাত্র একটি বিছানার উপরে একজন রোগীকে আলাদা করে রাখবে।

এছাড়া এটির চারদিকের পর্দা স্বচ্ছ ও উঁচু হওয়ায় রোগী কোনরকম অস্বস্তি বোধ করবে না। বিদেশের যন্ত্রে ক্যানোপির ভিতরের বাতাসের জীবানু ও ভাইরাসকে কেবলমাত্র বিশেষ ধরণের হেপা ফিল্টার দিয়ে যতটা সম্ভব আটকিয়ে রেখে পরিশোধিত বাতাস আবার হাসপাতালের কক্ষে ছেড়ে দেয়া হয়। এ গবেষক দলের ডিজাইনে হেপা ফিল্টারের সাথে বাড়তি আছে আলট্রাভায়োলেট আলোর প্রযুক্তি যার মাধ্যমে প্রথমেই সব জীবাণু ও ভাইরাস ধ্বংস করে ফেলা হয়। তাই এর গুণগতমান একই উদ্দেশ্যে তৈরি পৃথিবীর অন্যান্য যে কোন যন্ত্র থেকে উন্নত। এর দামও হবে বিদেশের একই ধরণের যন্ত্রের থেকে অনেক কম। এছাড়া দেশে তৈরি বিধায় সহজে মেরামতের গ্যারান্টিও থাকবে।

কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সম্মুখযোদ্ধা কর্তব্যরত চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘নেগেটিভ প্রেশার আইসোলেশন ক্যানোপি’ উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও আইসিইউতে ব্যবহার বিষয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কথা শোনেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনলাইনে যোগ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, এ্যানেসথেশিয়া ও এ্যানালজেশিয়া এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম আখতারুজ্জামান এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া ইতোমধ্যে গবেষণা প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্ধ করেছেন। এছাড়া যন্ত্রটি তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুরু থেকেই উৎসাহ দিয়ে আসছেন। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এ প্রকল্পে বিশেষ উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন এবং তার প্রয়াণের একদিন আগেও এর সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। ওষুধ কোম্পানী বেক্সিমকো ফার্মা এ প্রকল্পে আংশিক আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান