তারল্য সংকট মোকাবেলায় বন্ড মার্কেট জরুরি

শামসুল হুদা : সরকার এবং অর্থমন্ত্রীর কিছু পজিটিভ সিদ্বান্তের কারণে পুঁজিবাজারে প্রাণ ফিরে এসেছে বলে আমি মনে করি। নতুন করে ফান্ডে সরবরাহের কারণে ব্যাপারগুলো স্পষ্ট হয়, যার প্রতিফলনে বাজারের উর্ধগতি দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক হচ্ছে, বাজারের চালিকা শক্তি, যেমন ভাবে মানুষের শরীর এর রক্ত হার্ট থেকে পাম্প এর মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে, তাই ব্যাংককে তারল্য সংকট মুক্ত রাখতে হবে।

তারল্য সংকট মুক্ত রাখতে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে তা খুব দীর্ঘ মেয়াদী নয়, আপদকালিন, স্বল্প মেয়াদী ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার জন্য আমাদের পুঁজি সরবরাহ বাড়ল, এ পুঁজিটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে, ধরে রাখার জন্য পলিসি সাপোর্ট দরকার।

স্বাভাবিকভাবে ৩টা কারণে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নষ্ট হয় যেমন : যে সব দেশের সাথে আমাদের দেশের ব্যাবসায়িক পলিসি আছে। ব্যবসার ধরন পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়। কিন্ত শুধু আমাদের দেশে আরও একটি কারণ রয়েছে যা আর কোথাও নেই, সেটা হচ্ছে -দুর্নীতি ।

দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকারের একটা বিশাল পলিসি নেওয়া দরকার। যারা এ দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের যদি ব্যাংক টাকা না দেয়, তাহলে তারা দুর্নীতির সুযোগ পাবেনা। তাই ব্যাংক এর যে সমস্ত কর্মকর্তা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদের শাস্তির বিধান রেখে সরকারের পলিসি করা উচিত বলে আমি মনে করি।

উন্নত বিশ্বে পলিসি অনুযায়ী বন্ড সাপোর্ট দেওয়া হয়, তারা যেকোনো সময় তাদের প্রয়োজন অনুসারে হিসাব-নিকাশ করে সেন্ট্রাল ব্যাংক এর পারমিশন নিয়ে তারা একটা বন্ড ছাড়তে পারে। যা ওই মুহূর্তে সমস্যা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশেষায়িত ব্যাংক গুলো দীর্ঘমেয়াদী বন্ড ছাড়তে পারে।

ফান্ড সাধারনত তিনটা জয়াগা থেকে আসতে পারে। যেমন সাহায্য, বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ এবং পুঁজি। এখন যদি এই তিনটা পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কোন কারণে যদি ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দেয় তাহলে কেপিটাল নষ্ট হতে হতে কেপিটাল জিরো হয়ে যাবে। তারা ধীরে ধীরে মাইনাস এ চলে যাবেএ। আর তখনি সে জনগনের রক্ষিত টাকার উপর তার হাত পড়ে যাবে। তাই আমাদের প্রথমে পলিসির মাধ্যমে এই জিনিসগুলোকে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। যাতে তারল্য সংকট মেটানোর জন্য বন্ড ব্যবস্থায় যেতে পারে। কারণ বন্ডটা দীর্ঘ মেয়াদী। ব্যাংক খুব স্বল্প মেয়াদী, সেটার উপর নির্ভর করে ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদী পলিসি করতে পারবে না।

যে কারনে বরাবরই বলতে চাই আমাদের পার্টনার দরকার, মানে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান দরকার,যেহেতু চায়না দেশের মানি মার্কেট এ একটা বিশেষ পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে তাদের সাথে বিভিন্ন দেশ এর সাথে যাদের কাছে পুঁজি আছে, যারা ইনভেস্ট করে তাদের সাথে তাদের একটা ভালো অবস্থান আছে। তারা কিন্তু ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসে। ফলে তাদের ব্যবসাও কিছু হবে আমাদের ট্রানজেকশানও বাড়বে। ব্যবসাও তত বড় হবে।

কারণ লাভ তত বেশী হবে। তখন বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি বন্ড এর রেটিং অনুযায়ী তারা এখানে ইনভেস্ট করবে। তাহলে কিন্তু ফান্ড এর কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তাহলে কোন দেশের কাছে আমাদের ফান্ড এর জন্য ধন্যা দিতে হবেনা। ইউরোপ আমেরিকা বন্ড মার্কেট এ ছেড়ে দিচ্ছে , ফলে টাকা পেয়ে যাচ্ছে। তাদের উন্নয়ন হচ্ছে। তাহলে সরকারের ট্যাক্স ইনকাম এই সেক্টোর এর উপর এতোটা নির্ভর করতে হবেনা। আমরা আমাদের রেভিনিউ ইনকাম দিয়ে আমরা আমদের উন্নয়ন করতে পারব। এখন যদি সরকার কোন বন্ড আমাদের দেশে ছাড়ে তাহলে ফান্ড ট্রান্সফার হচ্ছে আমাদের দেশে, আমাদের দেশের যে টাকা আছে, জনগনের যে সেভিং আছে, ব্যাংক এর যে টাকা আছে তা দিয়ে এর মধ্যে ট্রানজেকশান হবে। কিন্তু যখন ইণ্টারন্যাশনাল এক্সপোজার এ চলে যাবে , তখন আমাদের দেশের টাকা আর টাকা না, সারা পৃথিবীর টাকা আমাদের এখানে ঢুকে যাবে।

স্টক মার্কেট আমাদের অর্থনীতির ব্যাকবোন, তাই ব্যাকবোনকে শক্ত করতে হবে, আরও শক্তিশালী স্টক মার্কেট এর জন্য আমাদের বন্ড মার্কেট অপরিহার্য। বন্ড মার্কেট ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশ উন্নয়ন, বাজেট ঠিক মত করতে পারবেনা। শর্টটার্ম মার্কেটে আছে -যেরকম একটি ব্যাংক এল সি করছে, কিছু দিন পর তাকে একটা সেটেলমেণ্ট করতে হবে। তার ফান্ড দরকার, সেক্ষেত্রে এটা শর্ট টার্ম ডিসকাউণ্ট দিতে পারে। যেমন ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকার ফান্ড কিনলাম, ব্যাংক আমাকে এটার উপরে ৩ মাসের জন্য ৩% ডিসকাউণ্ট দিয়ে দিলো। আমার ৩ লাখ টাকা ইনকাম। ব্যাংক এ ম্যাচুয়ের্ড ভ্যালূ ১ কোটি টাকা, ৩ মাস পর কিন্তু ১ কোটি টাকা পেয়ে যাচ্ছি। তাহলে কী হচ্ছে, দেশের মধ্যে ইনকামের অনেক সোর্স সৃষ্টি হবে। যেই সোর্সগুলো আমাদের নেই।

আমাদের যেটা করতে হবে, আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের যে স্টেকহোল্ডার আছে, যে মেম্বার আছে, তাদের বিভিন্ন জায়গায় যে ব্রাঞ্চ আছে, সে গুলো আরো বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ের মানুষের টাকাকে বাজারে আনা যাবে এবং ডেভেলপ করা যাবে। তার টাকাটাও বন্ড মার্কেটে আনা যেতে পারে। আপনি অনলাইনে ট্রেড করতে পারবেন সেটা ঠিক আছে। কিন্ত তাকে তো আরো অনেক সার্ভিস দিতে পারবেন না। এই জন্য অবশ্যই ব্রাঞ্চ দরকার আছে।

আপনি যদি একটি ষ্টোক কিনেন, দেখতে হবে তার ডেভিডেণ্ট কেপাসিটি কত! আমি বিনিয়োগ এর সঠিক সময় বলে মনে করি, ডেভীডেণ্ট যখন শতকরা ১০ ভাগে চলে আসে। এ সময় যারা শেয়ার কেনে তারা আর শেয়ারটাকে বিক্রি করে না। এক ধরনের বিনিয়োগকারী আছে যারা সেভিং হিসেবে শেয়ার কেনে। যখন অনেকগুলো টাকা জমে গেলো দামও ভালো পেলো, তখন শেয়ার বিক্রি করে। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরণের বিনিয়োগকারী খুবই কম। আমাদের মনে হয় বিনিয়োগের সুযোগটা এখনও চলছে, কারণ সব শেয়ার এর দাম এমন পর্যায়ে আসছে যে যেকোনো শেয়ার এ হাত দিলে শতকরা ১০ ভাগ রিটার্ন পাওয়া যাবে বলে মনে হয়।

আর ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক যখন মার্কেটে রেট কমে যায় তখনি কেনার সময়,যখন কেও আর কিনতে চায়না।

শামসুল হুদা
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
এ এন এফ ম্যানেজমেন্ট কোং লিমিটেড।

রাসেল/