মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ

তৈরি পোষাকখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে

মো: আলী আজিম খান: বায়ারদের চাহিদার তুলনায় আমাদের দেশের গার্মেন্টেনের সংখ্যা একটু হলেও বেশি আছে। তবে সে অনুপাতে বর্তমানে আমাদের কাছে বায়ারদের অর্ডার একটু কম। যার কারণের আমরা এখন নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতায় নেমেছি। একসময় ছিল ১০ লাইনের এখন হয়েছে ১০০ লাইনের। এই ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য বায়াররা এই সুযোগটা নেয়। এর জন্য বাধ্য হয়ে কম প্রাইসে অর্ডার নিতে হচ্ছে।

এজন্য বাংলাদেশ সরকার যদি আমাদের একটু সাপোর্ট দেয়, একটু ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করে দিলে অনেক ভালো হতো। বর্তমানে ভারত তাদের এইখাতের ব্যবসায়ীদের অনেক বাড়তি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। যার কারণে তারা বিশ্ব বাজার ধরতে পারছে। ফলে আমরা তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে।

আগে আমাদের প্রতি ইসনেন্টিভ ছিল ৫ শতাংশ, সেটা কমিয়ে করা হয়েছে ২ ও ৩ শতাংশ। যদি ৫ শতাংশে থাকে তাহলে আমরা মোটামুটি পুষিয়ে উঠতে পারি। তাছাড়া সামনে আমাদের ন্যূনতম ওয়েজের নিয়ম করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ হবে। যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ওয়েজ কম, সেজন্য বাইরের বায়াররা আমাদের দেশে আসছেন। এখন যদি আমরা ওয়েজ বাড়িয়ে দেই, তাহলে অটোমেটিক্যালি এখানে প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যাব। যা আমাদের জন্য খুব খারাপ একটা সংবাদ হবে। এ সুযোগ ভারত নিতে আমাদের পিছু লেগে আছে। যে হারে আমাদের দেশে গার্মেন্টস্ প্রতিষ্ঠান বাড়ছে তার তিন গুণ হারে ভারতে বাড়ছে। এর একমাত্র কারণ তাদের সরকার তাদের অনেক সুবিধা দিচ্ছে। তাছাড়া অবকাঠামোগত দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের নিজস্ব উদ্যোগেই আমরা সব করছি।

সরকারের পক্ষ থেকে এখানে কোন গামেন্টস্ পল্লী নাই। আমাদের সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক। আমার বাড়ি যেমন বড়িশাল। আমি যদি সেখানে গার্মেন্টস করতে পারি, তাহলে সেখানে কাজের সুযোগ বাড়তো, ঢাকার চাপ কম হতো, পরিবেশের ক্ষতি কমতো। এটা কিন্ত বিশাল একটা ব্যাপার হবে।

সরকার যদি ডি-সেন্ট্রালাইজড করে দেয় তাহলে দেশের প্রতিটা বিভাগে এর সুফল পাবে। কিন্ত এর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সাথে যদি ৫ শতাংশ ইন্টেনসিভ দেয়, তাহলে স্থানীয় এলাকার উন্নয়নের সাথে সাথে কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমরা টিকে থাকতে পারবো।

পাশাপাশি পণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে যদি আমাদের ডলারের মূল্য নির্দিষ্ট করে দেয়, তাহলে সেখানে আমরা একটা সুবিধা পেতে পারি। এইসব ব্যাপারে সরকার যদি আমাদের দিকে নজর দেয় তাহলে আমাদের টিকে থাকা সম্ভব। তা না হলে সামনে যে দিন আসছে সেখানে আমরা যারা গার্মেন্টস শিল্পের সাথে জড়িত তারা একটা ব্যাপক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যাব। অনেকের পক্ষেই যেটা বহন করা সম্ভব হবে না। একপর্যায়ে এসে আমাদের রপ্তানী অনেক কমে যাবে।

আমাদের নিকটতম প্রতিযোগি হলো একদিকে ভারত অন্যদিকে বার্মা (মায়ানমার)। এক্ষেত্রে বার্মা অনেক এগিয়ে। কারণ, তাদের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও গ্যাসে পরিপূর্ণ। যার কারণে চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান সেখানে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করছে। এভাবে ধীরে ধীরে তারা অনেক উপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে তো ভারত আছেই।

কিছুদিনের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রভাব পড়বে। কারণ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতি করতে গেলে সেখানে সবাইকে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। এর জন্য সবার আয় বাড়তে হবে। কিন্ত সেখানে মূল আয়ের সিংহভাগ হলো গার্মেন্টস্ শিল্প কেন্দ্রীক। গার্মেন্টস আছে বিধায় আমাদের এখন মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। তা না হলে সম্ভব হতো না।

গার্মেন্টস্ আছে বলেই বাংলাদেশে ব্যাংক, ইন্সুরেন্সসহ ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে।

এসব গড়ে উঠেছে কেবল মাত্র গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করে। এই গার্মেন্টস যদি টিকে না থাকতে পারে, তাহলে এই দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে কষ্ট হবে। সব ঝুঁকিতে পড়বে। কাজেই আমি মনে করি বাংলাদেশে সরকার এখন গার্মেন্টস্রে দিকে নজর দিক। আমাদের এক্সপোর্ট যদি বাড়তে থাকে তাহলে স্বাভাবিক ভাবে বাকি সবকিছু বাড়তে থাকবে।

মো: আলী আজিম খান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শাইনেস্ট গ্রুপ
প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ বাটন ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিবিএমইএ)