ত্বক ও চুলের যত্নে জলপাই

জলপাই একটি শীতকালীন ফল হওয়া সত্ত্বেও এর অসাধারণ স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সারা বছর ধরে মানুষের মনে থেকে যায়। আর বাজারে এখন জলপাইয়ের বেশ কদর। অনেকে সারা বছর খাওয়ার জন্য জলপাইয়ের আচার ও চাটনি তৈরি করে থাকেন। জলপাই-এ নানা পুষ্টিকর উপাদান, যেমন- ভিটামিন, মিনারেল এবং ভেষজ উপাদান, আয়রন, খাদ্যআঁশ, কপার, ভিটামিন-ই, ফেনোলিক উপাদান, অলিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান।

জলপাই ফলের দামের তুলনায় এর তেলের দাম আকাশচুম্বী। জলপাই তেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ্য এবং সুন্দর রাখে। গবেষকরা দেখিয়েছেন খাবারে জলপাইয়ের তেল ব্যাবহারের ফলে শরীরের ব্যাড ক্লোষ্টোরেল এবং ক্লোষ্টোরেল নিয়ন্ত্রণে থাকে।

নিয়মিত জলপাই খেলে পেতে পারেন এমন সব উপকারিতা যেগুলো প্রতিটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ চায়। কাজেই জেনে নেওয়া যাক জলপাইয়ের কিছু উপকারিতা-

ক্যান্সার প্রতিরোধে

জলপাই ভিটামিন- ই এর ভালো উৎস। জলপাইতে আছে মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাট। জলপাইয়ের ভিটামিন- ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে।

হৃদযন্ত্রের উপকারিতা

যখন মানুষের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে চর্বি জমে, তখন হার্ট অ্যাটাক করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। জলপাইয়ের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হার্ট ব্লক হতে বাধা দেয়। জলপাইয়ে রয়েছে মোনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী।

ওজন কমাতে

যখন জলপাইয়ের মোনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট অন্য খাবারে বিদ্যমান স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে গ্রহণ করা হয় তখন তা দেহের ভেতরের ফ্যাট সেলকে ভাঙতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের তেলেও রয়েছে লো কোলেস্টেরল যা ওজন এবং ব্লাডপ্রেশার কমাতে সহায়ক।

আয়রনের উৎস

জলপাই বিশেষ করে কালো জলপাই আয়রনের উৎস, আয়রন আমাদের দেহে রক্ত চলাচল করাতে সহায়তা করে, আর প্রাকৃতিক আয়রনের উৎসের জন্য জলপাই-ই সেরা।

অ্যালার্জি প্রতিরোধে

গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে। জলপাইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে

জলপাইয়ে যে খাদ্যআঁশ আছে তা মানুষের দেহের পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হজমে সহায়তা করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে

জলপাইয়ের তেলে আছে ফ্যাটি এসিড ও এ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা কিনা ত্বক ও চুলের যত্নে কাজ করে। জলপাইয়ের ভিটামিন ই ত্বকে মসৃণতা আনে। চুলের গঠনকে আরও মজবুত করে। ত্বকের ক্যানসারের হাত থেকেও বাঁচায় জলপাই। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা রোধ করে জলপাই।

চোখের যত্নে

জলপাইয়ে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য ভালো। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল তাদের জন্য ওষুধের কাজ করে জলপাই।

জলপাইয়ের টক-মিষ্টি আঁচার

এখন চলছে জলপাইয়ের মৌসুম তাই এখনি সময় সুস্বাদু আচার তৈরির। আসুন জেনে নিই খুব সহজে সামান্য ঝালের সাথে টক-মিষ্টি জলপাই আচারের রেসিপি –

উপকরণ

জলপাই, আখের গুড় বা চিনি, সরিষার তেল, সরিষা, সরিষা বাটা, আদা ও রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, লবণ, শুকনো মরিচ, রসুনের কোয়া।

পরিমান

জলপাই ১ কেজি, আখের গুড়/চিনি ২ কাপ, সরিষার তেল ২ কাপ, সরিষা ২ চা চামচ, সরিষা বাটা ৩ টে চামচ, আদা বাটা ২ টে চামচ, রসুন বাটা ২ টে চামচ , হলুদ গুঁড়া ২ চা চামচ, লবণ ১ চা চামচ, শুকনো মরিচের ২ টে চামচ এবং রসুন কোয়া।

প্রণালি
প্রথমে ফুটন্ত গরম পানিতে জলপাই ভাপ দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। বেশী সেদ্ধ করবেন না। জলপাইয়ের রঙ পরিবর্তন হলেই নামিয়ে ফেলুন।

এবার হাঁড়িতে তেল গরম করে আস্ত সরিষা ফোঁড়ন দিয়ে আদা-রসুন বাটা ভেজে নিন। -আদা-রসুন দানা-দানা হয়ে গেলে সরিষা বাটা, হলুদ গুঁড়া দিয়ে কষিয়ে গুড়/চিনি দিন। চিনি গলে গেলে জলপাই দিয়ে মিশিয়ে নিন। আঁচ মাঝারি রেখে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন, যেন তলায় লেগে না যায়। তেল ছেড়ে আসলে নামিয়ে ঠান্ডা করে রসুন কোয়া ও মরিচের রিং মিশিয়ে বয়ামে ভরে নিন। বয়ামে ভরার আগে কয়েকদিন কড়া রোদে দিতে পারলে আচার নষ্ট হবে না।

আজকের বাজার: আরআর/ ০২ নভেম্বর ২০১৭