ত্রিদেশীয় সফর অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসু হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সফরকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসু বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় এবারের আমার জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড-এই ত্রিদেশীয় সফর অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী রোববার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক ১১ দিনের ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

তিনি ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর শেষে শনিবার দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রী তার ত্রিদেশীয় সফলের শুরুতে গত ২৮ মে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছেন।

জাপানে তার অবস্থানকালীন বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে আয়োজিত নিক্কেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া. সেখানে তার সম্মানে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় ও যোগ দেন এবং জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার জাপানি নাগরিকদের পরিবারবর্গ এবং জাইকা সভাপতি শিনিচি কিতাওকার সঙ্গে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ৩১ মে সৌদি আরব পৌঁছেন এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৪ তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন।

তিনি মক্কাতে পবিত্র ওমরাহ পালন করেন এবং মদীনায় রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।

ফিনল্যান্ডে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী গত ৪ জুন সে দেশের প্রেসিডেন্ট সৌলি নিনিয়েস্টোর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ৫ জুন তার সম্মানে অল ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ‘গত ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত আমি জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর করি। সফর শেষে গতকাল আমি দেশে ফিরে এসেছি।’

জাপান সরকারের আমন্ত্রণে গত ২৮ মে হতে ৩০ মে পর্যন্ত তিনি জাপান সফর করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাপানে এটাই ছিল তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। সফরে অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল তার সফরসঙ্গী ছিলেন।

তিনি বলেন, ২৮ মে সন্ধ্যায় তিনি জাপানে অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন ২৯ মে সকালে জাপানের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তিনি গোলটেবিল বৈঠকে মিলিত হন। এতে জাপানের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী অথবা উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও এতে অংশ নেন।

দু’দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বৈঠকে তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। তারা চাইলে অন্যান্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভায় জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং তারা বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আশ্বাস দেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৭ জন জাপানি নাগরিকের পরিবারের সদস্যগণ ঐদিন দুপুরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘তাদের জানাই যে- হলি আর্টিজান ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে।’

বিকেলে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সেখানে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী আবে আমাকে স্বাগত জানান। এ সময় সুসজ্জিত একটি দল আমাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।’

তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী আবে আমাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তচ্যূত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য শিনজো আবে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিনজো আবে বলেছেন- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হওয়ার পথে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সম্রাট নারুহিতো, তার পরিবার এবং জাপানের জনগণকে সম্রাট নারুহিতোর সিংহাসন আরোহণের উৎসবমুখর উদযাপনে নতুন যুগের ‘রিইওয়া’ বা ‘সুন্দর ঐকতান’ আবির্ভাবের জন্য উষ্ণ অভিনন্দন জানান।

মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান বাংলাদেশের পাশে ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জাপান সফর করেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে।’

ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৭ জন জাপানি নাগরিকের জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী আবেকে জানাই যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে।’

এই বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় তিনি জাপানের মত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

জাপান দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের জন্য নতুন একটি অভিবাসন আইন গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আইনের আওতায় ‘নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিক’ শ্রেণিতে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি অনুমোদিত উৎস দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানাই। সম্ভাব্য কর্মীদের জন্য জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপানের সহযোগিতা চাই। জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।’

শেখ হাসিনা এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং তার সহধর্মীণী আকি আবেকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা বিবেচনার আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে আমার এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৪০তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজ স্বাক্ষরিত হয়। আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ চুক্তির প্রকল্পগুলো হল:

মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (১)

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি লাইন ওয়ান)

ফরেন ডিরেক্ট ইনভেষ্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্ট (টু)

এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফিন্যান্সিং প্রজেক্ট (ফেজ-টু)

শেখ হাসিনা বলেন, ঋণ প্যাকেজ স্বাক্ষরের পর তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এবং সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান সফরের তৃতীয় দিন ৩০ মে তিনি জাপানের মিডিয়া সংগঠন নিক্কেই ইনকরপোরেশন আয়োজিত ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতাসহ প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে সম্মেলনে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি উন্নত এশিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে কয়েকটি ধারণা পেশ করি। বাংলাদেশ সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় বলেও আমি সম্মেলনে উল্লেখ করি।’

সম্মেলনের পর জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে জাইকার অব্যাহত সমর্থন ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

৩০ মে সন্ধ্যায় তিনি নিক্কেই আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এশীয় অঞ্চলের ঐক্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি রূপরেখা প্রদান করেন।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসি’র চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ৩১ মে পবিত্র নগরী মক্কায় যান। পবিত্র শবেকদরের রাত্রিতে মক্কা নগরীতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এই সম্মেলনে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ দেড়শোর মত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এশিয়ার নেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে শেখ হাসিনা সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বেশকিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানারকম সমস্যার সম্মুখীন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সুদূরপ্রসারী পররাষ্ট্র নীতি ও প্রজ্ঞায় মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সদস্যপদ লাভের পর থেকেই বাংলাদেশ ওআইসি-তে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কনটাক্ট গ্রুপ-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অবদান রেখে চলেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গত বছর ওআইসির ৪৫তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করে এবং প্রায় এক বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে বাংলাদেশ ওআইসির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসির চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিম উম্মাহর উন্নতি সাধন তথা নির্যাতিত এবং নিপীড়িত মানবতার মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষত রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যেভাবে সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে তা শুধু মুসলিম দেশগুলোর জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বলে বারবার প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে ও দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপসমূহ আমি উপস্থাপন করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের এডহক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য গাম্বিয়া কর্তৃক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ওআইসির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার জন্য সম্মিলিত তাগিদ আসে। চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ইশতেহারে এটির উল্লেখ করা হয়।

তিনি বলেন, পাশাপাশি গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন এ উদ্যোগে আইনি ও আর্থিক সহযোগিতা যোগানের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আমি আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যে ইসলামোফোবিয়া তৈরি হয়েছে তা দূর করার উপায়, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা, ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক ওআইসি এজেন্ডা ইত্যাদি বিষয় এবং উপর্যুক্ত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা আমি উপস্থাপন করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং প্যালেস্টাইন ও আলকুদস বিষয়ে প্যালেস্টাইনিদের ন্যায়সঙ্গত দাবি ও অধিকারের বিষয়টি আমি সম্মেলনে তুলে ধরি।

তিনি বলেন, ওআইসি-২০২৫: প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন-এ প্রণীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ও মতামত অত্যন্ত জোরালোভাবে তিনি সম্মেলনে পেশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি সম্মেলনে জানাই যে বাংলাদেশে অবস্থিত ওআইসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সচেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি ওআইসির মধ্যকার আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ, সবুজ ও নীল অর্থনীতির উন্নয়ন, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে মধ্যপন্থার চর্চা ইত্যাদিতে ওআইসির প্রচেষ্টা ও উদ্যোগসমূহে বাংলাদেশ সব সময়ই সমর্থন দিবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই সম্মেলনে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগ, অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলো মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থানকালে তিনি উমরাহ পালন করেন এবং মদীনায় নবী করিম (সা.) এর রওজা মুবারক জিয়ারত করেন।

৩ জুন প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে পৌঁছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘৪ জুন বিকেলে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাওলি নিনিস্তো’র সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। ফিনল্যান্ড আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আলোচনায় আমরা উভয়দেশ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলাসহ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করি।’

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে সেখানকার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে জানানো হয় যে, শিগগিরই ফিনল্যান্ডের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।’

৫ জুন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশি এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করেন। তথ্যসূত্র-বাসস

আজকের বাজার/এমএইচ