দক্ষিণাঞ্চলে ৬ হাজার আয়রন ব্রিজ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করা হবে

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছয় হাজারের বেশি লোহার ব্রিজ সংস্কার করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। আয়রণ ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন নামের প্রকল্পের মাধ্যমে বরগুনাসহ বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও নির্বাচনী ইশতেহার ‘আমার গ্রাম হবে আমার শহর’ বাস্তবায়নে দক্ষিণাঞ্চলীয় আয়রন ব্রিজ নির্মান প্রকল্পটি গুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২৩ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে উপকূলীয় জেলাসমূহের আন্তঃগ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়নসহ পল্লী সড়ক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। এতে পরিবহন ব্যয় কমে যাবে, কৃষি ও অকৃষি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ সহজ হবে। তাছাড়া, গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে স¤পৃক্ত করার মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় দপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলিতে দ্রত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আশির দশকে প্রচুর লোহার ব্রিজ নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। মূলত পায়ে হাটার জন্য ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। এগুলোর বর্তমান অবস্থা জরাজীর্ণ। কোথাও কোথাও ব্রিজগুলো প্রশস্থ সড়কের যোগাযোগে ব্যবস্থায়ও বিঘœ সৃষ্টি করছে।
বরগুনার আমতলী সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আকন জানান, কোন অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। দক্ষিণাঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে আছে খাল, ছোট নদী। এখানকার যোগাযোগ সংযোগ স্থাপনে আয়রন ব্রিজগুলোকে কার্যকরী করে তৈরি বা পূনঃনির্মাণ খুবই ফলপ্রসু হবে।
আয়রণ ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল হাই জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১ হাজার ৯২৮টি লোহার ব্রিজ নিয়ে এ প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রীজ পুনঃনির্মাণ বা পুনর্বাসনের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার লোহার ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণ হয়ে যাবে। যে সকল জেলা ও উপজেলায় এগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা হলো- বরিশাল জেলার বরিশাল সদর, আগৈলঝাড়া, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মূলাদী এবং উজিরপুর। ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর, কাঠালিয়া, নলছিটি এবং রাজাপুর। ভোলার সদর, বোরহানুিদ্দন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা এবং তজুমুদ্দীন।
পিরোজপুরের সদর, ভান্ডারিয়া, কাউখালি, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর, নেছারাবাদ এবং ইন্দুরকানি। বরগুনার সদর, আমতলী, বামনা, পাথরঘাটা, বেতাগী এবং তালতলী। পটুয়াখালীর সদর, বাউফল, দশমিনা, দুমকি, গলাচিপা, কলাপড়া, মির্জাগঞ্জ এবং রাঙ্গাবালী।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো’র “আমার গ্রাম হবে আমার শহর” প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আংশিক কাজ বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যে এ বিভাগের বেশ কিছু গ্রাম নগরায়নে রূপ পেয়েছে। সকল গ্রামীণ সড়কে অবস্থিত লোহার ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা সড়কে ৩০৪টি লোহার ব্রিজ পুনঃনির্মাণ, ৫৪৯ টি ইউনিয়ন সড়ক, ২৩৭টি ইউনিয়ন সড়কে লোহার ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ এবং ৮৩৮টি গ্রাম সড়কে লোহার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করে এর সফলতা আসায় প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ডিপিপি প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বরগুনার সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের পল্লী অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে অধিকতর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, কৃষি পণ্য বাজারজাত বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে তা প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।
বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু জানান, প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আয়রন ব্রিজগুলো পর্যায়ক্রমে নির্মাণ/পূনঃনির্মাণ করে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়িত হবে।