দামুড়হুদায় শুরু হয়েছে বারোমাসি সজিনা ডাটার চাষ

জেলার দামুড়হুদায় এ প্রথম শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে সজিনা ডাটা ও পাতার চাষ। ফালগুন-চৈত্র মাসের মৌসুমী সবজি সজিনা ডাটা এখন সারা বছরই পাওয়া যাবে। সজিনার ডাটা ছাড়াও সবুজ ডালসহ পাতা গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও ডাটা, পাতা, বাকল, শেকড়, ফুল, বীজ এবং এ গাছের আঠাতেও মানব দেহের জন্য রয়েছে ওষুধি গুণাগুণ। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি গ্রামের মাঠে পাঁচজন চাষি, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কাজী ইয়াছির আরাফাত লিমন, হাউলি গ্রামের সফল সবজি চাষি রমজান আলী, বিল্লাল হোসেন, বয়রা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামান পরীক্ষামূলকভাবে সাত বিঘা জমিতে এ চাষ শুরু করেছেন। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কাজী ইয়াছির আরাফাত লিমন উপজেলার হাউলি গ্রামের মাঠে ৩ বিঘা জমি ৭২ হাজার টাকায় দুই বছরের জন্য লিজ নিয়ে এ চাষ শুরু করেন। রমজান আলী এ ডাটার চাহিদা গুণাগুণের বিষয় তার নিকট জানতে পেরে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার পরামর্শে একই গ্রামের মাঠে চাষ শুরু করেন। রমজান আলী সবজিসহ কাস্মীরি কুল, থাই পেয়ারা, থাই সিডলেস (বীজবিহীন) লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফলের চাষ করে থাকেন।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসে উপ সহকারী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কাজী ইয়াছির আরাফাত লিমন জানান, তার বন্ধু ডাঃ আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে পরিচয় হয় কুষ্টিয়ার সজিনা গবেষক রাজিব পারভেজের সাথে। তার মাধ্যমে ভারতের তামিল নাড়– রাজ্য থেকে বীজ সংগ্রহ করে। পরে সে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ক্ষেতখামারে এ সজিনা চাষ শুরু করে। এ ডাটার বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর দুটি জাতের রয়েছে এরমধ্যে পিকে এম-২ জাতের সজিনা রয়েছে। এ জাতের গাছে ১২মাস ডাটা পাওয়া যায়। পিকে এম-১ জাতের গাছের পাতা সজিনার চা, পাউডার ও ট্যাবলেট ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। এ ছাড়াও এ গাছের পাতা ডালসহ গোখাদ্য হিসেবে ও ব্যবহার করা যায়। এ জাত থেকে বছরে একবার ডাটা পাওয়া যায়। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে অন্যান্য খাবারের পরিবর্তে শুধুমাত্র সবুজ ডালসহ পাতা ৭কেজি করে প্রতিদিন খাওয়ালে এক থেকে দেড়কেজি ওজন বৃদ্ধিপাবে ও গাভীর ক্ষেত্রে ৬০% দুধ বৃদ্ধি পাবে। বারোমাসি এ সজিনা চারা লাগানোর ৬ মাসেই গাছে ডাটা ফলবে এবং সারা বছরই তা পাওয়া যাবে।একটি পূর্ণ বয়ষ্ক গাছে বছরে ৩শ’ থেকে ৪০০টি পর্যন্ত সজিনার ডাটা হবে। সাধারণত ২০টি ডাটায় ১ কেজি সজিনা পাওয়া যাবে। এ হিসেবে একটি গাছে ৪০থেকে ৫০ কেজি ডাটার ফলন সম্ভব। একটি গাছ থেকে ৪/ ৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে ১ বিঘা জমিতে ৪০০টি গাছ রোপণ করে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। সজিনা গাছের তেমন একটা পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। শুধু গরু-ছাগলের উপদ্রব ঠেকানো সম্ভব হলেই গাছগুলো বেড়ে ওঠে এবং তাতে ভালো ফলন হয়। সার ও কীটনাশক ব্যবহারেরও প্রয়োজন হয় না। তবে এ চাষে সফল হলে আগামীতে এলাকায় ব্যাপকভাবে এর আবাদ বৃদ্ধি পাবে।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল জানান, মানবদেহে হৃদরোগ, রক্তের প্রবাহবৃদ্ধি, টাইফয়েড, প্যারালাইসিস, বাতজ্বর ও লিভারের জন্য সজিনা অনেক উপকারী। এছাড়াও পোকামাকড়ের কামড়ে অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে সজিনা পাতার রস। সজিনার বাকল, শেকড়, ফুল, বীজ এবং এ গাছের আঠাতেও ওষুধি গুণ রয়েছে।
দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমান জানান,সজিনার ডাটা, পতা,বাকল যেমন মানবদেহে বিভিন্ন রোগের জন্য কাজ করে। সেই সাথে এর পাতায় প্রচুর পরিমান প্রটিন থাকায় গবাদি পশু মোটাতাজা করণে সামান্য পরিমান দেশীয় দানা খাবারের সাথে সবুজ ডালসহ পাতা খাওয়ালে দ্রুত ওজন বাড়ে। আমরা দ্রুত গবাদি পশু খামারিসহ সকলকে এ সজিনা আবাদ বৃদ্ধি করে নিজেদের কে আর্থিক ভাবে লাভবানসহ কম খরচে সবুজ ডালসহ পাতা খাইয়ে গবাদি পশু মোটাতাজা করণের পরামর্শ দিচ্ছি।