দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে এসব সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মুক্ত এবং দেশে মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা সকল কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুতরাং আমাদের দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন (বাসা)-এর বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে বক্তৃতা করেন।
বাসা সভাপতি হেলালউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এসোসিয়েশনের মহাসচিব শেখ ইউসুফ হারুন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সমিতির কার্যক্রমের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাসা সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা মেধা দিয়ে চাকরিতে এসেছেন। কাজেই আপনাদের মেধা থেকে উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন কি ধরনের কর্মসূচি নেয়া যায় তা আপনাদের চিন্তা করতে হবে। আর সেভাবেই আপনারা কাজ করবেন, তাই আমি আশাকরি।’
তাঁর সরকারের কাজ হচ্ছে প্রশাসনের জন্য কর্মোপযোগী একটি পরিবেশ সৃষ্টি। সেটা তাঁর সরকার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের জীবনমান যেন উন্নত হয় এবং আপনারা সুন্দরভাবে যাতে সংসার চালাতে পারেন সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে এ পর্যন্ত আমাদের যা করণীয় আমরা সাধ্যমতো তা করেছি।’

প্রতি তিন বছর পর পর বিনোদন ভাতাসহ ছুটি, ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি, আবাসনের জন্য ভবন নির্মাণ, যাতায়াতের জন্য গাড়ির বন্দোবস্তো করা সহ সরকারি কর্মচারীদের সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু এসবের বিনিময়ে দেশের মানুষ যেন ভাল সেবা পেতে পারে তা নিশ্চিত করাই সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবে, উন্নত জীবন পাবে, তা নিশ্চিত করতে হলে আপনাদের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশে নিয়ে এসেছি। একে অন্তত ১৬/১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে চাই।’
দেশের উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধারাবাহিতভাবে সরকারে আছি বলেই আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো আজ দৃশ্যমান হচ্ছে এবং এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে।’
দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি কর্মচারীদের অবদান স্বীকার করে তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে, দেশের উন্নয়ন করতে হবে এই চিন্তা মাথায় রেখেই সকলের কর্মক্ষেত্রে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে- দুর্নীতির ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানকারী এবং গ্রহণকারী উভয়েই সমভাবে দোষী। সেভাবে দেখতে হবে।’
সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়েও যে একটি দেশকে উন্নত করা যায় তাঁর সরকার ইতোমধ্যে তা প্রমাণ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের বাজেট প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি করেছি। ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।’

তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত জাতি গঠনের সময় একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে ৭ ভাগে উন্নীত করে দেশকে একটি স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যাওয়ার জাতির পিতার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করার পর থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রবৃদ্ধিকে অন্তত ৮ ভাগে তুলে আনা। আমরা তা ৮ দশমিক ১৩ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে অনেকদূর এগিয়েছি। দরিদ্র দেশ বলে কেউ আর আমাদের কটাক্ষ করতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক সূচকে গত সাড়ে ১০ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আমরা এর শীর্ষে উঠতে চাই।