দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলা মঙ্গলবার থেকে শুরু

শাহ্জাহান সাজু:
বত্রিশ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। এলক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নয় বছরের সাফল্য তুলে ধরতে সারাদেশে তিনদিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গতবারের মত এবারও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সামনে রেখে মঙ্গলবার ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৬৪টি জেলা এবং প্রতিটি থানায় যাতে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিদের্শনা রয়েছে। এবারের উন্নয়ন মেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পৃথকভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরবে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার নয় বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় তিনগুন বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। প্রায় চারগুন বেড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে রফতানি আয়। সাড়ে তিনগুন বেড়েছে প্রবাসী আয়। প্রায় দশ গুন বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। একইভাবে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অর্জন দেশের প্রতিটি মানুষকে জানাতে তিনদিনব্যাপী শুরু হচ্ছে উন্নয়ন মেলা। টেকসই উন্নয়ন ল্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সফলগাঁথা জনগণের সামনে তুলে ধরাই এই মেলার মূল ল্য।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগেই উন্নয়নমেলা অনুষ্ঠিত হবে। জেলায় জেলা প্রশাসক এবং থানায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেলার আয়োজন করবেন। এতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আলাদা আলাদা ভাবে তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ১০টি বিশেষ উদ্যোগ হচ্ছে- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, আশ্রায়ন প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর মতায়ন কর্মসূচি, সকলের জন্য বিদ্যুৎ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কমিউনিটি কিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ বিকাশ ও পরিবেশ সংরণ।
এদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশ কতটুকু এগিয়েছে সেসব বিষয় উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে-আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য বিমোচন। এছাড়া রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার। এই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেটে প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর দারিদ্র্য বিমোচনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের অর্থনীতি আর স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারেনি। তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ হতে পারেনি। তবে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের কৌশলগত দলিল হিসেবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) প্রণয়ন করেন। প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় গৃহীত কর্মকৌশল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ ২০১০-২০১৫ মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
এ সময়ে আর্থ-সামাজিক খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। কর্মসংস্থান, মজুরি, খাদ্যশস্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি, আমদানি-রফতানিসহ সকল অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি বজায় রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা। সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব কর্মসূচী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যের হার কমার পাশাপাশি বৈষম্যও হ্রাস পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৫ সালে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশে একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
আজকের বাজার : এসএস / ওএফ/ ৮ ডিসেম্বর ২০১৮