দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি

ভালো দাম পেতে গরু মোটাতাজা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে খামারিরা। অনেকে বেছে নেন ক্ষতিকর সব পদ্ধতি। কিন্তু এবার কিছু খামারিরা দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে ভালো ফল পেয়েছেন।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগির ইউনিয়নের দিয়ারা ভবানীপুর গ্রামের সুরত আলী মাস্টারের বিসমিল্লাহ ডেইরি ফার্মে দেখা গেছে, গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খামারের লোকজন। বিশাল বিশাল আকৃতির একেকটি গরু দেখে যে-কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই খামার থেকে ২০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে কোরবানির হাটের বিক্রির জন্য। এখানে সবচেয়ে ছোট গরুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কমপক্ষে ৮০ হাজার টাকা। আর বড় আকৃতির একেকটি গরু দেড় লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন খামারের লোকজন। গরু মোটাতাজাকরণ প্রসঙ্গে খামারের মালিক সুরত আলী মাস্টারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার এখানে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হয়। ইনজেকশন কিংবা ট্যাবলেট এই খামারে নিষিদ্ধ। ভুসি, খড়, খইল, নালী ও ঘাসই গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে একেকটি গরু ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মতো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে আমাদের ভয় হলো ভারতের গরু নিয়ে। যদি ঈদে ভারতের গরু দেশে আসে তাহলে আমাদের মাথায় হাত পড়বে। লোকসান গুনতে হবে লাখ লাখ টাকা।

একই খামারের আরেক সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও মোশারফ হোসেন জানান, তাদের খামারে সিন্ধি, পাকিস্তানি, অস্ট্রেলিয়ানসহ দেশি বিভিন্ন জাতের গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গরুর প্রধান খাবার কাঁচা ঘাস হলেও বন্যায় নষ্ট হয়েছে ঘাসের চারণভূমি। বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে খইল, ভুসিসহ অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। কোরবানির জন্য ২০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে একেকটি গরুর জন্য প্রতিদিন ২শ’ টাকার খাবার দেয়া হচ্ছে। মানিকগঞ্জ পৌর সভার দাশড়া এলাকায় ফেন্ডস ডেইরি ফার্মে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। ২২টি গরুর মধ্যে ১৫টি গরু কোরবানির হাটে বিক্রির করবেন বলে জানান ৫ সদস্যর খামারের মালিকরা। খামারের পরিচালক পৌরসভার নারী কাউন্সিলর সাবিহা হাবিব বলেন, আমরা ৫ জন মিলে এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছি। কোরবানির ঈদের জন্য ১৫টি গরু দেশি পদ্ধতিতে মোটাতাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। আমার খামারে ৬৫ থেকে একলাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত একেকটি গরু রয়েছে। তবে টেনশনে আছি দাম উঠবে কিনা তা নিয়ে।

যদি ভারতের গরু এসে যায় তাহলে আমরা মতো খামারিরা বিপদে পড়ে যাবেন। খামারের আরেক পরিচালক মহিনুর রহমান জানান, মানুষ বাচ্চাকে যেভাবে পরম মমতা দিয়ে লালন পালন করে থাকে ঠিক আমার খামারে গরুগুলোকে সেভাবেই লালন পালন করা হচ্ছে। অনেক জায়গার গরু মোটাতাজা করতে ইনজেকশন ও ট্যাবলেট খাওয়ানো হলেও আমরা বিষাক্ত এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কারণ পবিত্র কোরবানির ঈদে মানুষকে ভেজাল খাওয়ালে আল্লাহর কাছে ঠেকা থাকতে হবে। তাই দেশি পদ্ধতিতেই আমরা খামারে গরু মোটাতাজা করেছি। এসব খামারের মতো মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার শ’ শ’ খামারিরা এখন পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছেন গরু মোটাতাজাকরণ কাজে। এছাড়া জেলার শিবালয়, হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ১৫টি চরাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতেই গরু পালন করছেন খামারিরা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওইসব অঞ্চল থেকে এবার কোরবানির হাটে ৩০ হাজারের বেশি গরু নিয়ে যাওয়া হবে। তবে চরের গরুচাষিরা সবচেয়ে বেশি টেনশনে থাকেন ঈদের আগে চোর ডাকাতের ভয়ে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফরহাদুল আলম জানান, এবারে বন্যায় চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে খামারিদের। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খামারিদের খইল, ভুসি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গরুর রোগবালাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর গরু মোটাতাজাকরণে বিষাক্ত ইনজেকশন কিংবা ট্যাবলেট যাতে কোনো খামারি তার গরুকে না খাওয়ায় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, কোরবানিতে যদি ভারতের গরু দেশে না আসে তাহলে খামারিরা ভালো দাম পাবেন।

আজকের বাজার: আরআর/ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭