ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : স্পিকার

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্ষণ একটি নিকৃষ্টতম অপরাধ।

স্পিকার আজ জাতীয় সংসদের শপথ কক্ষে ইউএনএফপিএ-এর কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে বাস্তবায়নাধীন ‘এসপিসিপিডি’ প্রকল্পের আওতায় “কনসার্টেড রেসপন্স টু স্টপ চাইল্ড ম্যারেজ, প্রিভেন্ট জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স এন্ড ইম্প্রোভ মেটার্নাল হেলথ ডিউরিং নেচারাল ডিজায়াস্টার এন্ড কোভিড-১৯ পেন্ডেমিক”-শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।

স্পিকার বলেন, এসপিসিপিডি প্রকল্পের অধীনে তিনটি সাবকমিটি জনসংখ্যা উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যেমন-বাল্যবিয়ে রোধ, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধ, যুব উন্নয়ন, কিশোরীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে সফলতার সাথে কাজ করছে। এ উদ্দেশ্যে সংসদ সচিবালয়ের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সংসদ সদস্যগণের অংশগ্রহণে তৃণমূল পর্যায়ে সরাসরি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় যা অত্যন্ত কার্যকর।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে বন্যাকবলিত এলাকা, হাওর-চরাঞ্চলে গর্ভবতী নারীদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোন নারী নির্যাতনের শিকার হলে ন্যাশনাল রেসপন্স প্ল্যানের অংশ হিসেবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণ ফার্স্ট রেসপন্ডারের ভূমিকা পালন করে যাবতীয় আইনী সহায়তা পেতে তাদের সহযোগিতা করতে পারেন। সম্প্রতি চালুকৃত ‘মাই কনস্টিটিউয়েন্সি’-এ্যাপে কোভিড চলাকালীন সময়ে পরিবর্তিত তথ্যসমূহ আপডেট করার মাধ্যমে এর কার্যকরিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্পিকার বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে আরো সংবেদনশীল ও সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সচেতনতা প্রয়োজন। কোভিডকালীন সময়ে পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে মা-শিশু-নারীদের নির্যাতন থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এসপিসিপিডি আয়োজিত আজকের পলিসি ডায়ালগ থেকে আগামীতে প্ল্যান অব একশন নির্ধারণ করা যেতে পারে। নারীদের জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে।

স্পিকার বলেন, সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের দৃষ্টানাতমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারা বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।

তিনি আরো বলেন, মেয়েদের শিক্ষার জন্য বৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে এবং এর অর্থ মায়েদের মোবাইলে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে অনলাইনে চলে যাচ্ছে, যা মেয়েদের শিক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহ হিসেবে কাজ করছে।

স্পিকার অভিভাবকগণকে তাদের কন্যাসন্তানদের বোঝা মনে না করে, বরং তাদের সম্পদ হিসেবে গণ্য করে এবং অল্প বয়সে তাদের বিয়ে না দিয়ে শিক্ষার দিকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী করতে মতবিনিময় সভা আয়োজন করার তাগিদ দেন।

বাল্যবিয়ে ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ-বিষয়ক সাবকমিটির আহ্বায়ক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজের সভাপতিত্বে ও সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, সরকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন ।

এছাড়াও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো ও ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি ড. আশা টর্কেলসন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। বাল্য বিয়ে রোধ ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ উপ-কমিটির সদস্য আরমা দত্ত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে শিরিন আখতার এমপি, রুমানা আলী এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, নাহিদ ইজাহার খান এমপি, অপরাজিতা হক এমপি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এসপিসিপিডি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এম এ কামাল বিল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।