নওগাঁর জবই বিল এখন পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর

জেলার সাপাহার উপজেলার বিশাল জবই বিল এখন নানা প্রজাতির দেশী এবং পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলীতে মুখরিত। বিলকে দু’ভাগ করে চলে যাওয়া সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে উভয়াপার্শ্বে চোখে পড়বে হাজারো নানরকমের পাখির ঝাঁক। ঝাঁকে ঝ্াঁকে উড়ছে এসব পাখি। পাখিদের কলকাকলীতে সৃষ্ট নয়নাভিরাম দৃশ্য সেখানে প্রাত্যহিক। সাপাহার সদর থেকে থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ভারতের সীমানা ছুঁয়ে নওগাঁ জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এ বিলের অবস্থান।

স্থানীয় বিলপারের মানুষের কাছে জানা যায় , গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নানা জাতের পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর হতে থাকে বিলটি। সাইবেরিয়াসহ পৃথিবীর শীতপ্রধান এলাকা থেকে আসা বালিহাঁসের ঝাঁক উড়তে দেখা যায় আকাশজুড়ে। জলাশয়ে খাবারের খোঁজে বিচরণ করছে শত শত পাখি।

মূল জলাশয় ছাড়াও আশপাশের কৃষিজমিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, গাছের ডালপালা সর্বত্রই এ পাখিদের বিচরণ।

স্থানীয়রা জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে জায়গাটিতে পরিযায়ী পাখি আসছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে হাঁসজাতীয় পাখির সংখ্যাই বেশি। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও দেশি জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁস, বক পাখি এ বিল এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।

এ বিলে পাখি দেখতে আসা শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন জানায় ‘নিজের এলাকায় পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম দেখে অনেক গর্ব হয়। দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে আসে পাখি দেখতে। সময় পেলেই ছুটে আসি। এখানে এসে হাজারো পাখির বিচরণ দেখে মন আনন্দে উদ্বেলিত হয় উঠে।

সাপাহার উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা শিরন্টি ইউনিয়নে অবস্থিত এ বিল। জবই বিলের জলমহালের আয়তন ৪০৩ হেক্টর। জবই বিলঘেঁষা গ্রামগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম গ্রাম কলমুডাঙ্গা। এ গ্রামের কয়েকজনেরর সাথে কথা হলে তারা জানান, পাখিরা জলাশয় ছাড়াও গ্রামের গাছের ডালপালা, বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন জায়গায় ওড়াউড়ি করে। গাছের ফল খেয়ে ফেলে। এরপরও গ্রামের মানুষ পাখিদের কোনো সমস্যা করে না।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোহানুর রহমান সবুজের নেতৃত্বে জবই বিল ঘিরে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের সচেতন কয়েকজন তরুণ-তরুণীসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ নামের একটি কমিটি গঠন করেছেন। শিকারীরা যেন পাখি শিকার করতে না পারেন, সেদিকে নজরদারি করেন ওই কমিটির সদস্যরা।

জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ বলেন, শুরুতে এলাকার কিছু মানুষ জবই বিলে আসা পাখিদের অবাধে শিকার করতেন।

কিন্তু সচেতন মানুষ একজোট হয়ে এর প্রতিবাদ করায় এবং উপজেলা প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের ফলে এ বিলে পাখি শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পাখিরা বিলটিতে বেশ নিরাপদে আছে। প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে এ বিলে পরিযায়ী পাখি আসছে। শীতের শুরুতে এখানে পাখিরা আসতে শুরু করেছে।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, জলাশয়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের কেউ যাতে শিকার করতে না পারে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নজরে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও সচেতন করা হচ্ছে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে। পাখিদের বিচরণ যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন অত্যন্ত কঠোর। তিনি আরো বলেন, বিলপাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য বিলের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কের দুই পাশে বসার স্থান করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি জবই বিলকে একটি পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ভবিষ্যতে এ বিলকে আরও দৃষ্টিনন্দন করা হবে। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান