নওগাঁয় উন্মুক্ত বিলে হাঁস পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সম্রাট

জেলায় উন্মুক্ত বিলে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক বেকার যুবক। সম্রাট নামের আত্মপ্রত্যয়ী এ যুবক তাঁর সংসার থেকে অভাব দূর করে এনেছেন সুখ আর স্বাচ্ছন্দ। দালানের বাড়ি হয়েছে। হয়েছে গাড়িও। পিতামাতর একমাত্র সন্তান বাবা মা’কে নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করছেন। সম্রাটের এ সাফল্যের গল্প এলাকার মানুষের মুখে মুখে। অনেকেই তার এ উদ্যোগকে অনুসরন করে তাঁর মত স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।

নওগাঁ সদর উপজেলার ভর অঞ্চল বলে পরিচিত সরিজপুর গ্রাম। এ গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের পুত্র সম্রাট। এখন বয়স ২৫/ ২৬ বছর। মা বাবার একমাত্র সন্তান। ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত পড়ে অর্থেব অভাবে স্কুলে যাওয়া হয় নি। সংসারের খরচ যোগাতে বাবাকে প্রচন্ড হিমশিম থেকে দেখেছে সে। বাবার অক্ষমতার কষ্টের বিবর্ণ মুখ তাকে ব্যথিত করেছে। তাই সর্বক্ষন চিন্তা কিভাবে কি করে তাদের সংসারের অভাব দূর করা যায়।

এক পর্যায় হাঁস পালনের চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করে। হিসাব নিকাশ করে লাভজনক ভেবে শুরু এখন থেকে পাঁচ বছর আগে। বাড়ির পাশেই বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত বিল মনসুর। এ বিলেই মাত্র ২শ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে উন্মুক্তভাবে শুরু করেন হাঁস চাষ। সকাল থেকে হাঁসগুলো বিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন কখনও পানিতে কখনও ডাঙ্গায় হাঁস থাকে। স¤্রাটের সাথে দিনভর হাঁস দেখাশুনা করেন তার বাবা। সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে বিলের এক পাশে জাল দিয়ে ঘেরা এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে হাঁসগুলোর রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। সকাল হলে আবার বিলে নেয়া হয়। এভাবেই দিন যায়।

বর্তমানে সম্রাটের  এ উন্মুক্ত হাঁস খামারে তিনটি পর্যায়ে হাঁস রয়েছে। এক ধাপে রয়েছে বাচ্চা হাঁস ১ হাজারটি। এখন ডিম দিচ্ছে এমন হাঁস রয়েছে একটি পর্যায়ে ৮শ এবং আরেকটি পর্যায়ে ২শ। প্রতিদিন ডিম উৎপাদিত হচ্ছে কমপক্ষে ৮শ।

তার এ হাঁসখামারে মোট ৫জন লোক নিয়মিত কাজ করে। তাদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এখানে। তারা প্রতিমাসে আয় করে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। খাওয়া খামার মালিকের। যেহেতু বিলে চড়ানো হচ্ছে বলে হাঁসেদের খাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোন খরচ নেই। কেবলমাত্র একদিন বয়সের বাচ্চা কেনা, ওষুধপত্র, লোকবলের খরচ। কাজেই তার এ খামাড় অত্যন্ত লাভজনক।

তাঁর খামারের ডিম নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। আবার খামার থেকেও পাইকাররা এসে ডিম কিনে নিয়ে যান। সম্রাট গড়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেন ৭ টাকায়। প্রতিদিন ৮শ ডিম বিক্রি হয় ৫ হাজার ৬শ টাকায়। সেই হিসেবে মাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বছরে ২০ লাখ ১৬ হাজার টাকা। অপরদিকে বছরে কমপক্ষে ১ হাজারটি হাঁস বিক্রি করেন। প্রতিটি ৩শ টাকা হিসেবে সেখান থেকে আসে ৩ লাখ টাকা। স¤্রাট জানান বছরে সব খরচ বাদ দিয়ে তাঁর নীট লভ্যাংশ থাকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
হাঁসের এ খামার তার ভাগ্য বদলিয়েছে। বসবাসের জন্য মাটির ছোট্ট ঘরের জায়গায় বানিয়েছে দালান বাড়ি। সর্বক্ষনিক দেখাশুনার জন্য বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য একটি মোটরসাইকেলও কিনেছেন।

স্থানীয় উৎসাহী যুবক সুধাম চন্দ্র বলেছেন সম্রাটের এ হাঁস খামারের সফল্যের গল্প এলাকার সবাই জানে। অনেকেই এখন উৎসাহী হচ্ছেন এমন একটি হাঁস খামার গড়ে তুলতে।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ উত্তম কুমার জানিয়েছেন বর্তমান সরকার বেকারত্ব দূর করার জন্য নানামুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যুবকদের উৎসাহিত করছে। সে ক্ষেত্রে সরিজপুর গ্রামের সম্রাটের হাঁস খামার একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। কেবল সরকারী চাকুরীর আশায় না ঘুরে এভাবে আত্মপ্রত্যয়ী অনেকেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

আরজেড/