নওগাঁয় করোনা সন্দেহে চিকিৎসা না পাওয়া যুবক মারা গেল রাজশাহীতে

করোনা সন্দেহে নওগাঁর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবক মারা গেছেন। চিকিৎসকরা জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে আসা যুবক আল আমিন (২২) মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মারা যাওয়া যুবক আল আমিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের অলঙ্কারদীঘি গ্রামের কৃষক মকলেছুর রহমানের ছেলে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ করোনাভাইরাস সন্দেহে নওগাঁর তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন তাদের ছেলে।

স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আল আমিন নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। গত কয়েকদিন ধরে জ্বর আর কাশিতে ভুগতে থাকা আল আমিন শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাণীনগরে আসেন। এ সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ও গ্রামের লোকেরা তাকে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে নওগাঁ সদর ও আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা সেখানে তাকে রাখতে চায়নি বলে তাকে নিজ গ্রামের পাশের ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় রাখা হয়।

পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মন্ডল বিষয়টি জানতে পেরে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় যুবক আল আমিনকে চিকিৎসার জন্য রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তার অবস্থা খারাপ হতে দেখে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠান। তিন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুবক মারা যান।

নিহতের বাবা কৃষক মকলেছুর রহমান জানান, তার ছেলে আগে থেকেই এ রোগে ভুগছে। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করে আল আমিন। শুক্রবার রাতে আল আমিন গায়ে জ্বর আর কাশি নিয়ে খুব অসুস্থ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ থেকে নওগাঁর রানীনগর আসে। শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে আসার সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রামের লোকজন তাকে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি। তিনি জানান, নওগাঁ সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। এরপর শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের দেয়া কিছু ওষুধ ও ইনজেকশনের পরেও ছেলের শরীরের জ্বর কমছিল না।

কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, আল আমিন নামের ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নয় মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছেন। নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, ছেলেটা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমনটি খবর পাবার পর তার পরিবারকে বলেছি মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে গ্রামে আসেন। যদি করোনাভাইরাস না থাকে তাহলে সমস্যা নেই। আর যদি ভাইরাস থাকে তবে গ্রামে আসা যাবে না। গ্রামের সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা বাধা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো আল মামুন বলেন, ওই যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকরা তার মৃত্যু সনদে নিশ্চিত করে দিয়েছেন। তবে নিশ্চিত না হয়ে ছেলেটাকে গ্রামে যেতে না দিয়ে অমানবিক কাজ করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি। সূত্র- ইউএনবি

আজকের বাজার/ শারমিন আক্তার