নওগাঁয় বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত,পানিবন্দী লাখো মানুষ

নওগাঁয় বন্যা নিযন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আত্রাই নদীর ৬টি পয়েন্টে বাঁধ ও বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জেলার রানীনগর,আত্রাই ও মান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

এতে করে ৩ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। এসব এলাকার মানুষ এখন উচু স্থানে,সড়ক বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ পানিতে নিমজ্জিত বাড়ির পাশেই নৌকায় অবস্থান করছেন। এসব এলাকায় এখন বিশুদ্ধ পানি,শুকনা খাবারসহ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তবে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ ,জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বেশ কিছু এলাকায় সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

এদিকে আত্রাই নদীর ৬টি বাধঁ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে নওগাঁর মান্দা-আত্রাই,বান্দাখাড়া-আত্রাই,নাটোর সিংড়া-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা মো. ছানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আত্রাই উপজেলার জাত আমরুল এবং বৈঠাখালি নামকস্থানে বাঁধ ভেঙ্গে পাচুপর,আহসানগঞ্জ ও ভোপাড়া ইউনিযন নতুন করে প্লাবিতসহ ৫টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। উপদ্রুত ৫টি ইউনিয়নের  প্রায় ৫০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ১৪ হাজার পারিবারের ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ৩’শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে শুকনা খাবার এবং চাল বিতরণ করা হয়েছে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম জানিয়েছেন,আত্রাই নদীর ডান তীরে ৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় উপজেলার কশব ও বিষ্ণপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ২৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। এদের অনেকেই নদীর বাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এই দু’টি ইউনিয়নেন প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই উপজেলায় তাৎক্ষণিকভাবে ৫’শ পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার এবং চাল বিতরণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর-মালঞ্চি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, গত দুই দিনে জেলায় ৩ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। এপর্যন্ত ৩১৩৪ হেক্টর আউশ, ৩৭৬ হেক্টর রোপা আমণের বীজতলা, ২০০ হেক্টর বপণ আমণ, ৫০ হেক্টর রোপনকৃত আমণ, ১১ হেক্টর মরিচ, ১৫৪ হেক্টর সবজি এবং ৭৭ হেক্টর পাটসহ সর্বমোট ৩৮৪৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। যেহেতু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে এতে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে।
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদী, ফকির্নি ও ছোট যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৯টি স্থানে ও বেরীবাঁধের ৭টি স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে তিন উপজেলার ২৪২ টি পুকুরের ৬৮ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

জেলা ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জেলার তিনটি উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ১৩৫ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ২ হাজার ৫ শত নগদ টাকা ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। নদীর পানি কমতে শুরু করেছে শুক্রবার বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক  হারুন অর রশিদ। এসময় জেলা প্রশাসক বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ বৃহস্পতিবার বিকেলে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে পায়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে বানভাসী মানুষের সাথে কথা বলেন, তাদের বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি সহস্ররাধিক বানভাসী মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী হিসেবে ১০ কেজি করে চাল, চিড়া, স্যালাইনের প্যাকেট বিতরণ করেন। এছাড়াও বানভাসী মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল, ভ্রাম্যমান ল্যাট্টিন ও স্ট্রীট লাইটের ব্যবস্থা করে দেন। এসময় মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হালিম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিমসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা।

গত বুধবার রাতে ও বৃহ্সপতিবার সকালে নওগাঁয় আত্রাই নদীর ৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে আত্রাই ও মান্দা উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এর আগে ছোট যমুনা নদীর বেরী বাধঁ ভেঙ্গে রানীনগর উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপদ সীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।