নবাবগঞ্জে হচ্ছে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল

দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পরিকল্পিত শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে এবার রাজধানীর খুব কাছে নবাবগঞ্জে একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

জানা গেছে, ৮৭৪ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এরইমধ্যে বেজা এক হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক অনুমোদন আগেই নেয়া ছিল। এবার প্রকল্পের অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হতে পারে।

বেজা বলছে, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঢাকা থেকে ৩৯ কিলোমিটার, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ২৫৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই এ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পেলেই চার বছরের মধ্যে এখানে উৎপাদন শুরু হবে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, অনেক বিশ্বখ্যাত বিদেশি প্রতিষ্ঠান বড় বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে তাদের এই আগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আর তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উম্মোচন করতে নবাবগঞ্জে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

নবাবগঞ্জে হতে যাওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমত, রাজধানীতে যত বিপজ্জনক শিল্পকারখানা আছে সেগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য জমির ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা ঢাকার আশপাশে জমি চান, তাদের জন্য জমির ব্যবস্থা করা।

তিনি জানান, ৮৭৪ একর জমির মধ্যে ৮৩৪ একরই ব্যক্তি মালিকানাধীন। এসব জমিতে কোনো বসতি নেই। তাছাড়া বছরের একটা সময় পানির নিচে থাকে, বাকি সময় কৃষিকাজ হয়। এ অঞ্চলের খুব কাছেই ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী। ফলে প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নৌপথেও যোগাযোগ সুবিধা থাকবে।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, নবাবগঞ্জে অগ্রাধিকার পাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। বিশেষ সুবিধা পাবে পুরান ঢাকার রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল শিল্প। বিদেশিদের চাহিদাও মাথায় রাখছে বেজা। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন কিংবা আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা করার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে তার প্রমাণ নিমতলি কিংবা চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি। এই দুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বহু মানুষের জীবন। পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন সংস্থা উদ্যোগ নিলেও কোনো ফল আসেনি। এবার তাই রাজধানীর কাছে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বেজার চেয়ারম্যান জানান, এ অঞ্চল নির্মাণে অনুসরণ করা হবে সবুজ নীতিমালা। কারখানার পাশাপাশি জলাধার ও বনায়নের জন্য থাকবে নির্ধারিত স্থান। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনসহ সব সেবা নিশ্চিত করবে বেজা। শুধু তাই-ই নয় এ অঞ্চলে কারখানা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সংস্থায় ঘুরতে হবে না বিনিয়োগকারীদের। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার থেকে সব সেবা নেয়া যাবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এখন পর্যন্ত ১৫১টি দেশি-বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে- হোন্ডা মটরস, সুমিটোমো, নিপ্পন, এশিয়ান পেইন্টস ও বার্জার পেইন্টস, আদানি, উইলমার, ইয়াবাং, জিনদুন, সিয়াম গ্রুপ, টিআইসি গ্রুপ, ইউনিলিভার, সাকাতা ইনক্স ও চায়না হারবার অন্যতম।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের দ্বার উম্মোচন করতে বেজা এরইমধ্যে আটটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে শিল্প স্থাপনের উপযুক্ত করেছে। এগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের আওতাধীন মীরসরাই-২এ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই-২বি অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, এসবিজি অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল।