নাটোরে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে

জেলায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। উপকারভোগীদের আর্থিক বুনিয়াদ সুসংহত হয়েছে। তাদের বাড়িতে যেন দুধে-ভাতে বাঙালী আর মাছে-ভাতে বাঙালী’র পরিবেশ। প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিরা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিয়োজিত হয়েছেন। প্রকল্পভূক্ত জনগোষ্ঠীর আর্থিক লেনদেনকে সহজসাধ্য করতে মোবাইল এপস ‘পল্লী লেনদেন’ এর উদ্বোধন করা হয়েছে। ভিশন-২০২১,ভিশন-২০৪১ এবং স্বপ্ন সোপান এ তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ নামে ব্রান্ডিং করা দশটি উদ্যোগের মধ্যে সর্বশীর্ষে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তহবিল গঠন ও পারিবারিক খামারের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন।

এ প্রকল্পে গঠিত সমিতির প্রত্যেক সদস্য মাসে দুইশত টাকা সঞ্চয় জমা দিলে এর বিপরীতে সরকার সমপরিমান বোনাস দেন এবং একই সাথে সরকার বাৎসরিক দেড় লাখ টাকার আবর্তক তহবিল প্রদান করে। এভাবে দুই বছরে সমিতির তহবিল প্রায় নয় লাখ টাকায় উন্নীত হয় এবং তহবিলের মালিকানা স্থায়ীভাবে সমিতির সদস্যদের। সদস্যরা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আয়বর্ধক কর্মকান্ডে বিনিয়োগ করেন। নিয়মিত উঠান বৈঠক করে সাপ্তাহিক কিস্তিতে নয় বরং সুবিধাজনক সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন সদস্যরা। বেশী পরিমান অর্থ প্রয়োজন হলে সমিতি থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মাত্র পাঁচ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ঋণ নেয়া যায়। ইউনিয়নের ওয়ার্ড বা গ্রাম পর্যায়ে ৪০ জন মহিলা এবং ২০ জন পুরুষকে নিয়ে এ সমিতি গঠন করা হয়।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প নাটোর জেলা সমন্বয়কারীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৫ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত জেলায় মোট এক হাজার ৫৬টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। এসব সমিতির ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন সদস্য প্রায় ১১ কোটি টাকার সঞ্চয় জমা করেছেন। এ সঞ্চয়ের বিপরীতে সরকার সদস্য এবং সমিতি পর্যায়ে প্রায় ১১ কোটি টাকা অনুদান অর্থাৎ বোনাস প্রদান করেছে। সকল সমিতির সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

সিংড়া উপজেলার উত্তর ডাঙ্গাপাড়া দক্ষিণ ডাঙ্গাপাড়া আমার বাড়ি আমার খামার সমিতির সদস্য শ্যামলী রাণী সাত বছর আগে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছাগল পালন শুরু করেছিলেন। পরে সম্পুরক ঋণ নিয়ে এবং ছাগল বিক্রয়লব্ধ অর্থে তিনি এখন ১০টি গাভীর মালিক। প্রতিদিন দেশীয় জাতের গাভী থেকে প্রাপ্ত ছয় লিটার দুধ বিক্রি করছেন। রাতাল শালিকপাড়া বাকুন্দা আমার বাড়ি আমার খামার সমিতির সদস্য কমেলা খাতুন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সেলাই এবং গরু মোটাতাজাকরণ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। তাঁর তিন ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। এমনি করে সমিতির উপকারভোগী সদস্যবৃন্দ সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছেন। সমিতির সদস্যদের জন্যে গঠিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন সহজ করতে মোবাইল এপস ভিত্তিক ‘পল্লী লেনদেন’ চালু করা হয়েছে। সমিতির সদস্যরা জানালেন, মোবাইল এপস ব্যবহার করে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে লেনদেন করবেন। এতে ব্যাংকিং কাজ সহজ হবে, সময় বাঁচবে। দিনরাত ২৪ ঘন্টা ব্যাংকিং লেনদেনের সুযোগ থাকছে।

নাটোর সদর উপজেলার লক্ষীকুল-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণপুর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য মোমিনুল ইসলাম কাজল আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে দুইটি গরু কিনে মোটাতাজাকরণ করেছিলেন। গরু বিক্রির পর সংগৃহিত অর্থে পরবর্তীতে আরো পাঁচটি গরু কিনেছেন, জমিতে রসুন চাষ করছেন,বসতবাড়ির আঙ্গিনায় মাচা করে উৎপাদিত শিম বাজারে বিক্রি করছেন। কাজল বলেন, অল্প পুঁজির বিনিয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে আমার ধারণা হয়েছে। এখন আমার অর্থ সংকট নেই, কর্মক্ষেত্রেরও সংকট নেই। একই সমিতির চম্পা বেগম ব্রয়লার মুরগী আর হাঁসের খামার করেছেন। চম্পা বেগম বলেন, সমিতির ঋণে খামার করে বাড়িতে সমৃদ্ধি এসেছে। পরিবারে আগে অভাব ছিল, সমিতি করে অভাব দূর হয়েছে বলে জানালেন কমেলা খাতুন। খাজুরা ইউনিয়নের একডালা কুচকুড়ি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি রায়হান আলী ত্রিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। এক দফায় দেশীয় বর্ষালী মাছ বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। সভাপতি রায়হান আরো বলেন, সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ৩৭ এবং কর্ম ব্যস্ততার মাধ্যমে তারা সমৃদ্ধির পথে যাচ্ছেন।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প নাটোর সদর উপজেলার সমন্বয়কারী মোঃ মাজেদুর রহমান জানান, বিদ্যমান সমিতিগুলোর মনিটরিংসহ প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে কাজ করছি আমরা। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী মোঃ নজরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর পারিবারিক পর্যায়ের দারিদ্র্যতা নির্মূল হবে। তৃণমূল পর্যায়ের দারিদ্রতা দূর হলে বাংলাদেশ খুব সহজেই পৌঁছে যাবে সমৃদ্ধির সোপানে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের এপস ‘পল্লী লেনদেন’ সহায়ক ভ’মিকা পালন করবে।তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান