নামাজের গুরুত্ব

নামাজের আরবি শব্দ সালাত। সালাত শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দরূদ বা শুভ কামনা করা, তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা, রহমত বা দয়া, করুণা কামনা করা, ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাছাড়া কথা ও স্থান, কাল পাত্র ভেদে সালাত বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। সালাতের পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে- ‘নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ইবাদত আদায় করার নাম সালাত’।

বিশ্ব নবী (সা.) যখন মিরাজ গমন করেন, তখন মহান আল্লাহ তাআলা তার ওপর সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন। তারপর, কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে মিরাজ থেকে বিশ্ব নবী (সা.) দুনিয়ায় ফিরে আসেন। সালাত মুসলিম জীবনে একটি অপরিহার্য ইবাদত। এটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে মুক্তি একমাত্র সোপান। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার গভীর সর্ম্পক সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে এরশাদ হচ্ছে- ‘নিঃসন্দেহে সালাত বিশ্বাসীদের উপর সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আবশ্যকীয় করা হয়েছে’ (নিসা-১০৩)। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে একজন মোমিন বান্দা সময়ানুবর্তিতা ও দায়ীত্ব পরায়নতার শিক্ষা লাভ করে থাকেন। কেননা মোমেন বান্দা নিজের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে যথা সময়ে নামাজ আদায় করতে পারে। নামাজ পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে, শৃঙ্খলার সাথে আদায় করতে হয়। এই ইবাদতটি শুধু মানুষকে শৃঙ্খলিত করে না, বরং সৃষ্টি কর্তার সাথে দাসত্বে বন্ধনে আবদ্ধ করে তুলেন। তাই নামাজ প্রতিষ্ঠা মানে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। নামাজকে অস্বীকার করা মানে নিজের অস্থিতকে অস্বীকার করা। বিশ্ব নবী (সা.) এ ব্যাপারে বলেছেন- ‘যে সালাতকে প্রতিষ্ঠা করল, সে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করল। আর যে সালাতকে বিনষ্ট করল, সে দ্বীনকেই বিনষ্ট করল’। নামাজ এমন একটি ইবাদত, যে ইবাদতের মাধ্যমে মানসিক, মৌখিক ও দৈহিকভাবে সব কাজ সম্বনয় সাধন করা যায়। যার সাথে আর্থিক, আর্থ সামাজিক, মানসিকসহ ও অন্যান্য বিষয়সমূহ বিদ্যমান। আর্থিক বিষয়টি হলো রিজিকের সাথে অন্তর্ভুক্ত। নামাজি ব্যক্তি হালাল ও পবিত্র রিজিক নিশ্চিত না করে ভক্ষণ করেন না। শুধু মাত্র নামাজের মাধ্যমে দৈহিক-জৈবিক পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।

নামাজ গুরুত্ব বর্নণা করতে গিয়ে হজরত মোয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, বিশ্ব নবী (সা.) আমাকে দশটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, ‘কোন অবস্থাতেই ফরজ নামাজ ত্যাগ করা যাবে না। কেননা, যে ইচ্ছা করিয়া ফরজ নামাজ ত্যাগ করে, আল্লাহ তাহার দায়িত্ব গ্রহণ করেন না’। বিশ্ব নবী (সা.) বলিয়াছেন, ‘যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটিয়া গেল তাহার সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত ধন দৌলত যে লুণ্ঠিত হইয়া গেল’। হযরত রাসূল (সা.) আরো এরশাদ করেন- ‘বেনামাজীর ইসলামে কোন অংশ নেই’। এমনি ভাবে বিশ্ব নবী (সা.) অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা এই ছোট পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব না। তবু একটু চেষ্টা করলাম। বিশ্ব নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যথারিতি নামাজ পড়ে আল্লাহ তার নামাজের বদলে, পাঁচটি বিশেষ সম্মান দান করেন।

১.নামাজির অভাব দূর করেন, ২. কবরের আজাব দূর করেন, ৩. কেয়ামতের দিন ডান হাতে আমল নামা দিবেন, ৪. বিদ্যুতের ন্যায় পুলসিরাত পার করবেন, ৫. যথারীতি নামাজ আদায়কারী বিনা হিসাবে বেহেস্তে প্রবেশ করবেন।

যে ব্যক্তি নামাযে অলসতা করে সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা ১৪টি শাস্তি নির্দিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন। পাঁচটি ইহজগতে, তিনটি মৃত্যুর সময়ে, তিনটি কবরে ও তিনটি কবর হইতে বাহির হইবার পর হাশরে ময়দানে’। সালাতের অন্যতম শিক্ষা হলো বিনয় ও নম্রতা। সালাতের মনস্তাত্বিক ব্যবহার হচ্ছে বিনয় নম্রতা অর্জন করা। বিনয় নম্রতার মাধ্যমে একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। একাগ্রতাই সালাতকে প্রাণবন্ত করে তুলে। শুধু মাত্র অনুভূতিহীন ঠোঁট নাড়া চাড়া, উঠা বসার কোন গ্রহণ যোগ্যতা নেই।

কেননা, আল্লাহ তাআলা পাগল ও শিশুর ওপর সালাত আদায় করা অপরিহার্য করেননি। তবে যারা সুস্থ্য, বিবেকবান, বুদ্ধিসম্পন্ন, শারীরিক দিক দিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন তাদের উপর সালাত আদায় করা অপরিহার্য বটে। যারা পবিত্র আমেজ ও আবেগ, অনুভূতিতে জগতের সীমানা ভেদ করে আরশে আজিমে সিজদাহ পৌঁছাতে পারে, তারাই নামাজকে প্রাণবন্ত বা জীবন্ত করে তুলতে পারে।

এমন নামাজেই মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ইমানী জীবনকে পূর্ণতা দান করেন। যখন কোন নামাজি বান্দার জীবন থেকে এক ওয়াক্তে নামাজহীন সময় পার হয়, তখন তার জীবনে শূন্যতা বোধ হয়। এই শূন্য সহজেই পূরণ হয় না। তার মাঝে সৃষ্টি করে চরম মানসিক দুচিন্তা। পরকালে জাহান্নামের শাস্তি সে তো দূরতম বিষয়। প্রত্যেক মোমিন বান্দার আত্মার সাথে আত্মজিজ্ঞাসা থাকে। প্রকৃত আত্মজিজ্ঞাসার সদুত্তর হলো আল্লাহর আস্তিত্বকে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস একমাত্র সালাতের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। এমনি ভাবে কোরআন ও হাদীসে শুধুমাত্র নামাজ পড়া নয়, নামাজ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কেননা কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে। বোখারী ও তিলমিজি শরীফে এসেছে, ‘সালাত পবিত্রতার প্রতীক ও জান্নাতের যাওয়ার চাবি কাঠি’। বিশ্ব নবী (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না, ইসলামে তার কোন অংশ নেই। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করে, সে জাহান্নামী’। বিশ্ব নবী (সা.) বলেন, ইমান ও কুফরের মধ্যে এক মাত্র পার্থক্য হলো নামাজ’। নামাজ মানব জীবনে সময় নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়ন্ত্রিত জীবনের শিক্ষা প্রদান করে। মানুষ যখন যা দেখবে তখন তা ভাবতে শিখে। তাই নামাজ দৃষ্টি ও মন নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দিয়ে থাকে।

সর্বশেষে এ কথাই বলতে চাই, ব্যক্তি জীবনে মুক্তির জন্য নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা বাস্তব জীবনে যে যা কিছু করি না কেন পরকালীন শান্তির জন্য নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ ব্যাপারে হাদীস কোরআনে অনেক বর্ণনা রয়েছে। সেসব বিষয় ছোট আলোচনায় টেনে আনা সম্ভব নয়। তাই ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নামাজের শিক্ষাগ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করি।

আজকের বাজার/আখনূর রহমান