নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করতে নারী বিচারকদের আন্তরিক হতে হবে

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক লিঙ্গ সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে নারী-পুরুষ সবাইকে একসাথে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি আজ শুক্রবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনের ২৯তম সাধারণ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ আহবান জানান।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ।
আইনমন্ত্রী বলেন,‘নারীদের অংশগ্রহণ সবক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও ঘরে-বাইরে তারা এখনও নির্যাতিত হচ্ছে। এ নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।’
নারীদেরকে পরিবার,সমাজ ও জাতির মূল চালিক শক্তি হিসেবে অবিহিত করে আনিসুল হক বলেন, আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করতে নারী বিচারকদের আন্তরিক হতে হবে। সহ¯্রাব্দের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের নিজেদের স্বচ্ছতা ও সততা সমুন্নত রাখতে হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের সব সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিচারকর্ম বিভাগও এ উন্নয়নের অংশীদার।
তিনি বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য নারী বিচারকদেরকে স্বীয় মেধা, মনন ও কৌশল প্রয়োগ করারও আহবান জানান। কিভাবে হয়রানীমূলক মামলা কমিয়ে মানুষকে অল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে ও সহজে বিচারিক সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা বিচারকদেরই দায়িত্ব বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আইনমন্ত্রী নারী বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা (নারী বিচারপতি) নারী ও পুরুষ নন, শুধুই বিচারক। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতার সাথে পালন করে বিচারক হিসেবে তাদেরকে জনগণের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে হবে। সেজন্য বিচারিক জ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি ও মামলা ব্যবস্থাপনায় তাদের দক্ষতা অর্জনেও মনোযোগি হতে হবে। দৈনিক কর্মঘন্টা যেন বিচারকর্মে যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখাও তাদের দায়িত্ব বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আনিসুল হক বলেন,তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে, বিশে^র যে কোন দেশের যে কোন বিষয় এখন ‘আমাদের হাতের মুঠোয়’। তিনি তথ্য প্রযুক্তির এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নারীদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করারও পরামর্শ দেন। মন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ অন্য যে কোন পেশার চেয়ে স্বাতন্ত্র বৈশিষ্টপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে এ স্বাতন্ত্র বৈশিষ্টের কথা মনে রাখতে হবে। যাতে তাদের পেশাগত গোপনীয়তা ও স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট বজায় থাকে।
তিনি বলেন, সরকার মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়েই নারী বিচারকদের বিচার প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে। যেসব জুডিসিয়াল কাপল রয়েছে, তাদেরকে একই জায়গায় পদায়ন এবং অন্যান্য চাকরিজীবী কাপলদের ক্ষেত্রেও পারিবারিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে তাদের পদায়নের বিষয়টি সহানুভুতির সাথে দেখছে।
তিনি বলেন, নারীদের এটিও মনে রাখতে হবে যে, বিচার বিভাগের চাকরি বদলীযোগ্য হওয়ায় তাদের কর্মজীবনের সকল পোস্টিং সবসময় সুবিধাজনক স্থানে নাও হতে পারে। তাই এই চ্যালেঞ্জকে সহজভাবে মেনে নিয়ে বিচারকর্মে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে ১৯৭৪ সালে প্রথমবারেরমত বিচার বিভাগে নারীদের যোগ দেয়ার বাঁধা বিলুপ্ত করা হয়। শুরু হয় অধস্তন আদালতে নারী বিচারকগণের পথচলা। এরপর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০১ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১১ সালে আপিল বিভাগে সর্বপ্রথম নারী বিচারপতি নিয়োগ দেন। এছাড়াও ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় বিচার বিভাগে এখন নারীদের অংশগ্রহণ, অন্যান্য পেশার মতই লক্ষণীয় হারে বাড়ছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ১১তম বিজিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৫৩ জন নারীর বিচার বিভাগে যোগদানের পর বর্তমানে মোট বিচারকের শতকরা প্রায় সাড়ে ২৭ ভাগ হচ্ছেন নারী বিচারক। যা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক ও উৎসাহমূলক।
মন্ত্রী বলেন, ‘এ সংখ্যা ইউরোপ আমেরিকাসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি’।
বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি জিনাত আরা ও সলিসিটর জেসমিন আরা বেগম বক্তৃতা করেন।