নারীর সাজানো ঘর, নারীর প্রিয় মন্দির

ঘর হচ্ছে প্রিয় মন্দির,যে মন্দির ফুলে ফুলে সাজানো, সে মন্দির হয় চিত্তাচর্ষক; সঞ্চারিত হয় প্রাণের স্পন্দন।

দিনশেষে সাজানো গোছানো ঘর,আর ফুলে ফুলে সাজানো ব্যালকনি কিংবা ফুলতোলা বিছানার রঙীন চাঁদর, পর্দা এসবের ভেতরও প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়।সন্তানের দৌঁড়ে ছুটোছুটি তার উৎফুল্লতা আর সারাদিনে সে কী করলো,আপনার কাছ থেকে কী শিখল এসবও সে মন্দিরের অন্তভূক্ত।কারন মন্দিরের সবচাইতে সুশোভিত ফুল হচ্ছে আপনার সন্তান।

ইদানীং শিক্ষার্থী, শিক্ষকের সাথে সম্পর্কগুলো অমসৃণ পর্যায়ে তর্ক বিতর্ক ছড়াচ্ছে। তাই প্রতিটি অভিভাবকের দরকার সন্তানের প্রথম শিক্ষক হওয়া।মেয়ে শিশুগুলোকে ঘর সংসারের কাজগুলো সমন্ধে আগে থেকেই বুঝিয়ে বল্লে,তারাও আগ্রহ দেখাবে।সাংসারিক হতে শিখবে। ছেলে শিশুগুলো ছোটবেলা থেকেই কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির, তাদের খেলাধূলা ও চঞ্চলতার প্রতি সচেতন দৃষ্টি দিতে হবে,যেন অকারণে কারো সাথে মারামারি,হাতাহাতি বা অযথা ঝগড়া, তর্কে লিপ্ত না হয়। তাদেরকে বিনয়ী,বিশ্বাসী এবং ব্যক্তিত্ব সমন্ধে বোঝানো উচিত।উভয় সন্তানকে ব্যবহার,আদব এবং ধর্মীয় অনুশাসনের আওতায় আনা শৈশব থেকেই জরুরী।

সংসারে এসব বিষয় মা ও বাবা দুজনের জন্যেই জরুরী। বাবা, মা উভয়েই যদি চাকুরীজীবি হোন তবে সন্তানকে কাছের আত্মীয়ের নিকট রেখে যেতে হবে।ঘরে যদি বয়োজ্যোষ্ঠ দাদা, দাদী বা নানা, নানী থাকেন তাদের কাছে রাখা হলে সবচেয়ে ভালো।বুয়াদের কাছে সন্তানের বেড়ে ওঠা বা নির্ভরতা কখনোই ভালো নয়। এতে করে শিশুটির মন নষ্ট হতে পারে এই ভেবে তাকে অবহেলা করা হচ্ছে।তাছাড়া যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।আর সন্তানের হাতে বয়োঃপ্রাপ্ত হবার আগেই মোবাইল দিয়ে নিশ্চিন্তে ছেড়ে দেয়া কখনোই উচিত নয়।মোবাইলের ব্যবহার বিশেষ করে যে দিক গুলো ক্ষতিকারক সে সমন্ধে নিষেধাজ্ঞা, অসদ্ব্যবহার ইত্যাদি সমন্ধে ঘর থেকেই সচেতনতা বাড়াতে হবে।এছাড়া মেয়ে শিশুটিকে অপরিচিত পুরুষ সদস্যদের কাছে ঘেষতে দেয়া অনুচিত। তারা সুযোগ বুঝে ক্ষতির কারন ঘটাতে উদ্যত হতে পারে তাই তাদের প্রতি অতি বিশ্বাসী মনোভাব পোষনের প্রয়োজন নেই।তাছাড়াও পরিচিত পুরুষ সদস্য চাচা, মামা,খালু বা ফুপার কাছেও যে নিরাপদ থাকবে তাও নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সমাজে মেয়ে শিশুরা তার খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে নীপিড়নের শিকার হয়।তারা কখনো লোভ দেখায় কখনো ভয়। ছেলে শিশুর প্রতিও এ ধরণের অমূলক আচরন দেখা যাচ্ছে।

তাই অভিভাবক হিসেবে প্রত্যেক সদস্য বা আত্মীয়ের নিকট নিরাপদ দূরুত্বে রাখতে হবে।প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের কারা, কীভাবে স্পর্শ করছে সে সম্পর্কে বিভিন্ন সচেতনমূলক ভিডিও দেখানো হয়।সেগুলো শিশুদের দেখিয়ে বোঝাতে হবে এবং নিজেকেই সাবধান হতে শেখাতে হবে।

এবার আসা যাক গৃহিণীদের প্রসঙ্গে।বাংলাদেশে সমাজব্যবস্থায় এখনও সংকীর্ণতার কারনে নারীরা বা গৃহিণীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।পড়াশোনা বা চাকরীর ক্ষেত্রে বা নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে বাবারবাড়ি বা শ্বশুরবাড়ি সবখানেই বৈষম্যের শিকার হোন।

তাদের ব্যাপারে বলবো মন খারাপের কিছু নেই।ঘরে বসেই একজন নারী কোন না কোন কাজে অথবা আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।

নারীদের ব্যাপারে বলা হয়,যিনি রাঁধতে জানে তিনি ভালো চুলও বাঁধতে পারেন।ইন্টারনেটের কল্যানে ফিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিং এর কাজ শিখে নিতে পারেন।ভালো কোনো কম্পিউটার কোর্স শিখে ফেলুন সুযোগ মতো।ভালো সেলাই জানা থাকলে অথবা হাতের কাজ, বিভিন্ন পুঁথি সু্ঁতোয় গেথে নানা মনিহারী জিনিস,ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বা ঘর সাজানোর জন্য মনোরম শোপিস,ফুলদানি, ব্যাগ এসবও বানিয়ে নিতে পারেন।এতে করে একজন নারী যেমন তার শৈল্পিক মনোভাবকে বিকশিত করছে আর এসব অর্ডার করিয়েও আর্থিক সংস্থান ঘটিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বীরূপে পরিচয় দিতে পারছে।গ্যার্মেন্টস শিল্পেও পিছিয়ে নেই নারীদের অগ্রণী ভূমিকা।বর্তমানে পার্লারে কাজ শিখে নিজেই বিউটি পার্লারের মালিক হচ্ছেন। একদিকে সাজিয়ে এবং আয় করে বেশ উপভোগ্য ও আকর্ষনীয় হচ্ছে এই পেশাটি।এছাড়াও রান্না,ব্লক বাটিকের কাজ বুটিকস শিল্প বা ফ্যাশন হাউজেও নারীরা সদ্ব ইচ্ছায় বিনিয়োগ করছেন,ভালো আয়ের পথও বেছে নিয়েছেন। এতে করে অর্থনৈতিক ভাবে, উন্নয়নের চাকা সচল করতে এখন সক্রিয় হচ্ছেন নারী।গার্মেন্টস শিল্পের পাশাপাশি নারীদের সাধারণ হাতে করা ফুলতোলার অনন্য সাধারণ শৈল্পিক কারুকাজ যেমন কাঁথা স্টিচের তৈরী নানা রকম কাঁথা, বেডশিট,ওয়ালমেট এ ব্যবহার করা মনোহারী নকশা,আল্পনা ব্যবহার যার পরনাই মন কেড়ে নেবার মতো।এসব সূঁচের ফাঁকে ফাঁকে থাকে প্রতিটি সাধারন নারীর মনের যত রঙ,নকশা, জল্পনা কল্পনা কখনোবা নির্ঘুম রাতের ভাবনা।তাই দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল ও মজবুত রাখতে এসব শৈল্পিক গুন সম্পন্ন নারীদের ভূমিকা,তাদের চিন্তাভাবনা ইত্যাদি লেখনী বা মিডিয়ার মাধ্যমে বহির্বিশ্বেও তুলে ধরা বাঞ্চনীয় বটে।এতে করে অনেক অপ্রকাশিত চিন্তাধারা,পরিকল্পনা বের হয়ে নারীদের আয়ের উৎস সফলভাবে বিকশিত হতে পারবে,কল্যানমুখী কর্মকান্ডে নারীদের আগ্রহ ও সক্রিয়তাও বেড়ে যাবে বহুগুণে।

এছাড়া গৃহিণী রূপী নারীর কোনো কারনে মন খারাপ হলে,ঘর সাজানোটা বেশ উপভোগ্য বিষয়। নতুনত্ব কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়টি ভাবতেও ভালো লাগে।যেমন সোফার রঙের সাথে ঘরের রঙের সামঞ্জস্য বিধান করে সোফার কভার কিনে এনে সাজানো।অথবা নিজেই সুন্দর সুন্দর ফুল তুলে নকশা করতে পারেন কভারে বা কুশনগুলোয়, তাতে তার রুচি ও মননশীলতা দুটোই প্রকাশ পাবে।দেয়ালের রঙের সাথে মিলিয়ে বাহারি পর্দাও, শোকেজে সুন্দর সুন্দর শোপিজ সাজিয়ে রাখার মাঝেও নারীর অভিরূচী ও দর্শন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।শোপিজ গুলো একটু দেখে কেনা উচিত, একটু ব্যতিক্রমধর্মী এসব শোপিজ গুলো শাহবাগে ফুলের দোকানের সাথে রকমারি সাজপশরায় সাজানো বাহারি দোকানগুলোতেও সুলভ মুল্যে পাওয়া যাবে। এছাড়াও শহর থেকে দূরে কোথাও ঘুরে আসলে স্বতন্ত্র কিছু চোখে পড়লে তা ঘরে এনে চিত্তাকর্ষের মনোরম উপাদানে পরিনত হতে পারে।বাড়াতে পারে ঘরের শোভা ও প্রফুল্লতা।ঘরের খালি স্থানগুলোয় কাঁথা স্টিচের ওয়ালমেটগুলো দিয়ে সাজালে তাতেও সৌখিনতার পরিচয় মিলবে।এসব ছাড়াও নানারকম ফুলগাছ ব্যালকনিতে সাজিয়ে রাখা হলে অথবা ঘরের বাড়তি অংশে ছোট বড় বা আকার অনুযায়ী হাতে নির্মিত লতা পাতার গাছগুলোও সৌখিনতার পাশাপাশি পুরো ঘরের পরিবেশকে দেবে অনুন্য সাধারণ মাধুর্যতা।এসব সাধ ও সাধ্যের ভেতরেই করা যায় পত্রপত্রিকা থেকে খোঁজ নিয়ে বা সামান্য চোখ কান খোলা রাখলেই জানা যাবে।এছাড়া ইন্টারনেটেও জেনে নিতে পারেন।তবে ব্যাপক খরচা একেবারেই নয় সবকিছু ভারসাম্যপূর্ণ হলে বুদ্ধিমত্তারও পরিচয় মিলবে একজন স্মার্ট গৃহিণীর।

তাই এসব ঘর সাজানো যেমন আনন্দের তেমনি সৌখিনতার মাঝেও ফুঁটে ওঠে আভিজাত্য। ঘরের মেঝেতে দামী কার্পেট বিছাতে না পারলেও শতরঞ্জির ব্যবহার এখন বেশ সমাদৃত।

মাঝে মাঝে ছুটির দিনগুলোয় প্রিয়জনদের নিমন্ত্রন দিয়ে মজাদার খাবার আপ্যায়ন করাটাও বেশ আনন্দের ।ঘরোয়া পরিবেশে হালকা মিউজিক ছেড়ে দিয়ে মধুময় আবেশ তৈরী করতে পারেন যা আপনার মস্তিষ্ক শীতল হবার পাশাপাশি স্মৃতিকে মোহনীয়তা দান করবে।পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করুন।ফেসবুকে অযথা অপরিচিত বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন এ ব্যাপারে সন্তানের প্রতি যত্নবান হউন।

লেখক: হাসিনা সাঈদ মুক্তা