নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নে ওয়েন্ডের যাত্রা

নারী ব্যবসায়ীদের সার্বিক উন্নয়ন এবং উদ্যোক্তা শ্রেণির ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ওয়েন্ড) নামে নতুন সংগঠন পথচলা শুরু করেছে।

নারীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে দেশে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে এ সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে ওয়েন্ড এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওয়েন্ড এর অনুমোদন, উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ওয়েন্ড এর প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় কাজ করে এমন বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আমি দেখেছি সবাই নারী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়, চেষ্টাও করে। কিন্তু একটা সময় টিমওয়ার্ক গড়ে উঠে না। তখন থেকে ভাবতাম নারীদের এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবেলা করা যায়। সবাই মিলে নারী উদ্যোক্তাদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারি অনুমোদনের একটা সংগঠন করি তাহলে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকে গত ৫ বছর চেষ্টা করে ১৭ সেপ্টেম্বর সরকার ওয়েন্ড অনুমোদন দিয়েছে। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য নারী ব্যবসায়ীদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা।

তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করা ওয়েব, জয়িতা, তৃণমূল ট্রেড বডি হিসেবে লাইসেন্স পেয়েছে। চতুর্থ ট্রেড বডি হিসেবে ওয়েন্ড লাইসেন্স পেল। অনেক চেম্বার, ফেডারেশন আছে যারা নারীদের নিয়ে কাজ করে। তারা সরাসরি অথবা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা অধিদপ্তর, এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি, সুষ্ঠুভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা, সম্প্রসারণে সার্বিক সহায়তা প্রদান, দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান রাখাসহ নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করবে ওয়েন্ড। ওয়েন্ড ইতোমধ্যে এফবিসিসিআই এর সদস্যপদ পেয়েছে। সরকারের সব মহল থেকে এ সংগঠনকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

ড. নাদিয়া বিনতে বলেন, এ সংগঠনের মাধ্যমে আমরা ঢাকার বাইরে অর্থাৎ সারাদেশে নারীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। নারী উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট ও প্রমোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংগঠন করা। এ সংগঠনের মাধ্যমে নারীদের থিউরিটিক্যাল সাপোর্ট দিতে চাই। এছাড়া ট্রেড লাইন্সেস প্রাপ্তি, ই-টিআইএন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া, কোন নারী একটি পণ্য তৈরি করে, সে পণ্য বিষয়ে ট্রেনিং এর মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা, টেকনোলজি বিষয়ে সাপোর্ট দেওয়া, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, যাতে একজন আরেকজনের পরিপূরক হিসেবে নারীরা উঠে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করা। এ সংগঠনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায় কার্যক্রমকে বেগবান করতে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় এ সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে যেতে চাই।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ৮ বিভাগে কার্যক্রম শুরু করেছি। ওয়েন্ড এর ৮ জন নারী উদ্যোক্তা ৮টি বিভাগে ৮টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের দায়িত্বে আছেন। তাদের কাছে তাদের আওতাধীন জেলা উপজেলা ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তারা তাদের সমস্যা ফোনে, লিখিত বা সরাসরি জানাতে পারবেন। এসব সমস্যা দায়িত্বরত উদ্যোক্তারা ওয়েন্ড এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্যদের জানাবেন। স্থানীয় সমস্যা হলে স্থানীয়ভাবে বা বড় কোনো সমস্যা হলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের সহায়তা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা এ সংগঠনের কেন্দ্রের কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাণিজ্যমেলায় নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের পণ্য নিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভেলিয়নে ওয়েন্ড এর একটি স্টল দেওয়া হয়েছে। সেখানে নারী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে। ওয়েন্ড থেকে আমরা সম্প্রতি রোহিঙ্গা পরিদর্শন ও তাদের সহায়তা করেছি। ওয়েন্ড এর মাধ্যমে দেশে নারীর ক্ষমতায়নে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং এ সংগঠনকে এগিয়ে নিতে আপনাদের সহায়তা কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়েন্ড এর সহ-সভাপতি শামীমা শারমিন লাইজু, সাধারণ সম্পাদক জিসান আক্তার চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারা সিদ্দিকী, উপ কোষাধ্যক্ষ জর্জিনা খালেদ, নির্বাহী সদস্য আয়েশা সিদ্দিকা, নাসিমা হক ও মাহবুবা রব মাহবু উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার: এলকে/২৫ জানুয়ারি ২০১৮