নির্মাণ খাতে ২০১৭ সালে নিহত ১৭৯ শ্রমিক

নির্মাণ খাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ২০১৭ সালে ১৭৯ জন শ্রমিক নিহত ও ৪২ জন আহত হয়েছেন। ওশি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বার্ষিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে নিহত ১৭৯ শ্রমিকের মধ্যে ১৭৫ জনই ছিলেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নির্মাণশ্রমিক। তারা শ্রম আইনের আওতায় না থাকায় তাদের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না। ওশির নিজস্ব তথ্য সংগ্রহকারী ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমিক হতাহতের দিক থেকে নির্মাণ খাতের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০১৬ সালেও দেশের নির্মাণ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক নিহত হন। ওই বছর নিহত হন ১৪৭ জন শ্রমিক; অর্থাৎ গত বছর নির্মাণশ্রমিক নিহতের সংখ্যা বেড়েছে।

২০১৭ সালে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মোট ১ হাজার ২৪২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৭১ জন। এর মধ্যে ৬৭৯ জনই কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে পরিবহন খাতে ৪৮৮, নির্মাণ খাতে ১৭৯, পোশাক শিল্পে ৫২, স্টিল মিল ও রি-রোলিং মিলে ৮, জাহাজ ভাঙা শিল্পে ১৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৯৯ কৃষিশ্রমিক, ১০৩ দিনমজুর, ২২ গৃহকর্মী, ২৮ জেলে এবং অন্যান্য খাতে ২২১ জন নিহত হন।

গত ১০ বছরে ঝরে গেছে এক হাজার ৫০৯ নির্মাণশ্রমিকের প্রাণ; অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১৫০ জন নির্মাণশ্রমিক মারা গেছেন। শ্রমিক হতাহতের প্রধান দু’টি কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া এবং ওপর থেকে পড়ে যাওয়া। তা ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর আঘাত, গ্যাস বা ধোঁয়ায় দমবন্ধ হওয়া এবং আগুনে পুড়ে অনেকে হতাহত হয়েছেন। তা ছাড়া জরিপ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১০৩ জন দিনমজুর মারা গেছেন যাদের বেশির ভাগই কোনো না কোনোভাবে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ছিলেন। এ সংখ্যা যোগ করলে নির্মাণ খাতে নিহতের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে।

ওশির নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার না করা। অথচ হেলমেট, হাত মোজা, সুরক্ষা চশমা, সেফটি বেল্ট ব্যবহার করলে অনেক দুর্ঘটনাই কমানো যেত। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে নির্মাণ খাতের শ্রমিক। কিন্তু হতাহতের পরিমাণের দিক থেকে নির্মাণশ্রমিকেরা হচ্ছেন ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে দেশে বিভিন্ন খাতে মোট এক হাজার ২৪২ শ্রমিক মারা যান।

ওশির পক্ষ থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই) এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যৌথ শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, শ্রম আইনে হতাহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের বিধান পর্যালোচনা করে এর পরিমাণ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়। এ ছাড়া হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, মালিকপক্ষের উদ্যোগে শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেয়া, সরকারের উদ্যোগে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতর থেকে নির্মাণাধীন স্থাপনায় নিয়মিত শ্রম পরিদর্শন এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

আজকের বাজার: সালি / ৩০ জানুয়ারি ২০১৮