নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

ফেনীতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে অবাধে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাটও। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেউ মুখ খুলছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, শর্শদী ইউনিয়নের সফিয়াবাদ গ্রামের কেরানি বাড়ি সংলগ্ন কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। একটি খননযন্ত্র দিয়ে কাটা মাটিগুলো চারটি পিকআপে করে অন্যত্র নেয়া হচ্ছে। প্রতি পিকআপ ভর্তি মাটি কিনতে খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। সেখানে মাটি কেনাবেচার কারবার করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলম। সফিয়াবাদ ও শর্শদীসহ আশপাশের এলাকায় তার মাধ্যমেই মাটি কেনাবেচা হয়। মাটি কাটার স্থানে প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত হওয়ার আগেই গাড়ি সরিয়ে নিতে নিজস্ব লোকজন দিয়ে পাহারা বসিয়েছেন। প্রশাসনের নজর এড়াতে নিকটস্থ সড়কে গাড়ি চলাচল না করে দূরবর্তী এলাকা হয়ে মাটি গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, মোরশেদ ও তার সহযোগীরা ফসলি জমির ৫-৬ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেন। এতে করে পাশ্ববর্তী জমিও ফসল উৎপাদনে উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। যে জমি থেকে মাটি কাটা হয় সেটি থেকে ৫-৬ বছর ধরে ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না।

শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া জানান, দিনে মাটি বিক্রি হয়না। গভীর রাতে চুরি করে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে মাটি বিক্রি করা হয় বলে তিনি জেনেছেন। এদিকে, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, মুহুরী প্রজেক্ট ও থাকখোয়াজেরলামছি মৌজায় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় এক শ্রেণির দুর্বৃত্তরা অবৈধভাবে জোরপূর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়ায় কৃষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মাটিদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। আমিরাবাদ ইউনিয়নের একটি সিন্ডিকেট গত কয়েক দিন ধরে আমিরাবাদ ও মতিগঞ্জ ইউনিয়নের চরকৃষ্ণজয় গ্রাম ও স্বরাজপুর গ্রামের চড়ইয়া হাতর থেকে ফসলি জমির মাটি উত্তোলন করে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পাকা পুল, কালভার্ট ও সড়ক ভেঙে গেছে। এতে বিক্ষব্ধ এলাকাবাসী মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবুর সহযেগিতায় স্বরাজপুর গ্রাম থেকে মাটিসহ তিনটি ট্রাক্টর আটক করে। মতিগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও একাধিক সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে। যার ফলে সড়ক, পুল ও কালভার্টগুলো ভেঙে গেছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তিনটি ট্রাক্টর আটক করে আমাকে খবর দিলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করি।

সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুরের আশপাশের মুন্সীবাড়ী সড়ক, চর দরবেশ ইউনিয়নের সেনেরখিল, চর মজলিশপুর, চরছান্দিয়া, মঙ্গলকান্দি, মতিগঞ্জ আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক দেবে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। পিচঢালা রাস্তাগুলো অত্যধিক চাপে ভেঙে পড়েছে। মেকাডম ভেঙে ইটের লালচে বালু ছড়িয়ে পড়েছে। ধুলাবালু ছড়িয়ে পড়ায় সড়কগুলো পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও সর্বসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মুহুরী প্রকল্প এলাকা এবং থাকখোয়জেরলামছি মৌজা, সোনাপুর, সুজাপুর, সুলাখালী, ছাড়াইতকান্দি থেকে মাটিখেকোরা এক শ্রেণির সরকার দলীয় নেতাকর্মীকে ম্যানেজ করে দিনের আলোয় বড় বড় মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে। নিরীহ কৃষকের ফসলি জমি থেকে না জানিয়ে বা জবরদখল করে মাটি কেটে নিচ্ছে। ভূমিদস্যুরা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে মাছের প্রকল্পের কথা বলে শত শত একর কৃষি জমি নষ্ট করছে। এর প্রভাব বেশি পড়েছে সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন থাকখোয়াজের লামছি মৌজার স্লুইসগেট এলাকায়। বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন জানান, মাটি সিন্ডিকেটের সাথে তিনি জড়িত নন। দলীয় নেতা কর্মীরা জড়িত থাকায় তিনি বাধা দিয়ে বিরাগভাজন হতে চান না। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজয় দেব জানান, ‘স্থানীয় জনগণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো অবস্থায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা যাবে না। যারা এ ধরনের কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, ‘কৃষি জমির টপ সয়েল মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’সূত্র:ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান