পটুয়াখালীতে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’সহ ২১ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’সহ ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ১৬ প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

শনিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে তিনি এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন,  দেশের মানুষ আর কষ্ট করবে না। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। উন্নয়নের কারণে কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়, গৃহহীন না হয়ে পড়ে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করা অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালী সরকারি কলেজের পাঁচতলা গার্লস হোস্টেল ও শিক্ষা কাম-পরীক্ষা হল নির্মাণ কাজ, ইসহাক মডেল ডিগ্রি কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কলেজ, আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন কলেজ, হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার কলেজে চারতলা শিক্ষা ভবনের নির্মাণ কাজ, কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ, সুবিদ খালী ডিগ্রি কলেজ ও দুমকি জনতা ডিগ্রি কলেজের চারতলা শিক্ষা ভবন নির্মাণ কাজ, দুমকি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন, মির্জাগঞ্জ ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ স্টেশন, পায়রাবন্দর শেখ হাসিনা সড়ক এবং পায়রাবন্দর সার্ভিস জেটি, মসজিদ, অফিসার গেস্ট হাউস ও স্টাফ ডরমেটরি।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, পটুয়াখালী সরকারি কলেজের পাঁচতলা বিজ্ঞান ভবন, শ্রীমান্ত নদীতে ৯৬ মিটার সেতু, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও মির্জাগঞ্জ উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (তৃতীয় পর্ব) প্রকল্পের আওতায় দুটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পায়রাবন্দর প্রকল্পের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসন এলাকা।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই এলাকায় এলএনজি টার্মিনাল করে দেব। যাতে এলএনজি শিল্পখাতসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগও আমরা নেব।’

স্বপ্নের ঠিকানার উদ্বোধন উপলক্ষে তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় ১৩০টি পরিবারের জন্য আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এই পরিবারগুলোতে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি তো বটেই, ঘরও তৈরি করেছি। যাতে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন করতে গিয়ে কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি বাড়িগুলোতে গিয়েছিলাম। বাড়িগুলো চমৎকার। ১৩০টা সেমি পাকা বাড়ি। এছাড়া এখানে খেলার মাঠ, দুইটা পুকুর, স্কুল, দোকানঘর, কাঁচাবাজার, ৪৮টি ঘর নলকূপেরও ব্যবস্থা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিয়েছি এখানে মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করতে। কাজেই স্বপ্নের ঠিকানা নাম দিয়ে যে বাড়িঘর তৈরি করেছি তারা সেখানে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবেন।’

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এখানকার ছেলে- মেয়েরা চাকরির সুযোগ পাবে। সেই ব্যবস্থা আমরা করতে পারব বলেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অঞ্চলে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস তৈরি করে দিচ্ছি। এ এলাকা একসময় অবহেলিত ছিল, সেটার দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। এই অঞ্চল ঘিরে আমরা আমাদের মহাপরিকল্পনা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকায় আমরা একটা দ্বীপ খুঁজছি। এটির সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই চলছে। আমরা এখানে পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে দেব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। ২০২০-২১ কে আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটি এলাকায় আমরা ইন্টারনেট সার্ভিস এনে দিয়েছি। আমরা ব্ঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি সবক্ষেত্রে আমরা এ স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই এ প্রকল্পগুলোর যেন ভালোভাবে ব্যবহার করা হয়। আমরা গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করছি, গৃহায়ন তহবিল থেকে অর্থবরাদ্দ দিচ্ছি। পটুয়াখালী এলাকায় আসতে আগে কোনো ব্রিজ ছিল না। এখন এলাকার সবগুলো ব্রিজই বলতে গেলে আমাদের করা। অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো যেন সচল হয়, ড্রেজিং করে আমরা সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’