পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়িয়ে নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের নতুন বাজার অনুসন্ধান ও বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যাতে মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশ রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি পণ্যগুলোর বিচিত্রতা বাড়াতে হবে, আপনাদের ভাবতে হবে রপ্তানি পণ্যে আপনি কতটুকু বৈচিত্র্য আনতে পারেন।’ এক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন বাড়ানোর আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

রোববার (২৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘গন্তব্য বাংলাদেশ: বৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রবেশপথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৬০ বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের একটি বা দুটি জায়গায় রপ্তানি করার একঘেয়ে মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে অনেক দেশ উন্নয়নশীল, আমাদের ওই জায়গার দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কোন দেশ কোন ধরনের পণ্য চায়, আমাদের সেই আইটেমগুলো উৎপাদন করতে হবে।’

নির্দিষ্ট এলাকার চাহিদা খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় উৎপাদিত পণ্যের বিষয়ে সন্ধান করতে হবে, ওই পণ্যের চাহিদাও বিবেচনায় রাখতে হবে।

দেশ ও বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পায়ন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি

বলেন, ‘আমাদের পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করতে হবে, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শিল্পায়নকে আরও উন্নত করতে পারব।’

অর্থনৈতিকভাবে দেশের আরও অগ্রগতির জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা ও বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করব।’

দেশের অগ্রগতির জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮.২৫ শতাংশ জিডিপি অর্জন করতে সক্ষম হবে। আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, ক্রয় ক্ষমতার পাশাপাশি আমাদের মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

৮.২৫ জিডিপি বৃদ্ধির অর্জনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের একটি বড় ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

গত দশ বছরে সারা দেশে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধু শহর এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবছে না। আমরা গ্রামীণ এলাকাগুলোতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির জন্য পরিকল্পিত উপায়ে কাজ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা এখন ক্ষমতায় আছি, সামনে নির্বাচন, বাংলাদেশের জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় তবে আমরা আমাদের অসম্পূর্ণ উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো সম্পন্ন করতে পারব, ভোট না দিলে পারব না….’

শেখ হাসিনা বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ব্যক্তিগত বিনিয়োগের মাধ্যমে এমনকি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা অন্য কোন পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতে পারেন।

সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার বিনিয়োগ এবং ব্যবসা করার সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন, নীতি ও অন্যান্য মৌলিক নীতি প্রণয়ন করবে সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, উদ্যোক্তারা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসা করবেন। এক্ষেত্রে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভর না করে দেশের শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, উদ্যোক্তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং অন্যান্য মৌলিক সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বিশেষ সুপারিশ প্রণয়ন ও জমা দেওয়ার জন্য উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) ও ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভিশনারী লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। তথ্যসূত্র-ইউএনবি।

আজকের বাজার/এমএইচ