পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৪০.৫০ শতাংশ

ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ। মূল সেতু নির্মাণের কাজ হয়েছে ৩৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেই সঙ্গে অন্যান্য অংশের কাজও এগিয়েছে সন্তোষজনক ভাবেই। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে প্রতিবেদনটি তৈরি করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পটির অন্যান্য অংশের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাজিরা প্রান্তে এ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৯১ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে এ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ১০০ ভাগ, সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ ১০০ ভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া নদী শাসন কাজ ২৯ শতাংশ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৯৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দের ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৯৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম শনিবার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যেভাবে বাস্তবায়ন কাজ চলছে এতে করে ২০১৮ সালেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

অন্যদিকে ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদনে মেগা ১০টি প্রকল্পের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : এ প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় কাজের ৯৩ দশমিক ৮২ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় চুক্তির কাজ ১০০ ভাগ শেষ হয়েছে। তৃতীয় চুক্তির কাজ সন্তোষজনকভাবে শেষ হয়েছে। চতুর্থ চুক্তির কাজ চলছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সমাপ্ত হবে। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৬১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৫৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা এডিপি বরাদ্দের ২৫ দমমিক ৪৬ শতাংশ। প্রস্তুতি পর্যায়ের এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৬১৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের মাচ থেকে আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মেট্রোরেল প্রকল্প : মেট্রোরেল প্রকল্পটির কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ এর জন্য টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২ ও ৮ নং প্যাকেজের চুক্তির দরপত্রের কাজ চলছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ২২৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা এডিপি বরাদ্দের ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৯০২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : এ প্রকল্পটির ওনারস ইঞ্জিনিয়ার্স এবং কয়লা পরামর্শক নিয়োগের কাজ ১০০ ভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র এবং ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন-১ এর কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৯১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। তবে প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ও ব্যয়ের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র : এ প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ওনারস ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ, ভূমি হস্তান্তর সংক্রান্ত কাজ, পরিবেশ ছাড়পত্রের কাজ ১০০ ভাগ সমাপ্ত। এছাড়া বাউন্ডারি ফেন্সিং কাজ ৯০ শতাংশ, সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ চলছে। ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ : এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা এডিপি বরাদ্দের ১৪ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ : এ প্রকল্পটির অনুকুলে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬৩১ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪২৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ২ দশমিক ২০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ : প্রকল্পটি বিল্ড ওন অপারেট এন্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই টার্মিনাল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। এছাড়া এলএনজি আমদানির জন্য এখনো কাতারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর : এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখনো অর্থায়ন কোন উৎস থেকে হবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : এ বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ আওতায় জমি অধিগ্রহণ, ওয়ার হাউজ নির্মাণ, সার্ভে বোর্ট, পাইট ভেসেল ইত্যাদি ক্রয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।