পরিবেশের জন্য হুমকি: মাগুরায় এক গ্রামেই ৩০ ইটভাটা!

মাগুরা সদর উপজেলায় বাগবাড়িয়া গ্রামে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদী দখল করে প্রায় ৩০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এতে একদিকে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাগুরা সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া, কুছুন্দি, পাতুড়িয়া এলাকার মধুমতি নদী দখল করে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০টি ইটভাটা। গ্রামজুড়ে ইটভাটা থাকায় এটি ধুলাবালিতে সয়লাব হয়ে উঠেছে। সেই সাথে ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভাটার মাটি, বালি ও ইট পরিবহনে‘ডাম গাড়ি’ব্যবহার করায় রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বাগবাড়িয়া গ্রামটি‘ইটভাটা গ্রাম’হিসেবেও ব্যাপকভাবে পরিচিত।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এতোগুলো ইটভাটার কারণে এই গ্রামে কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। এসব অবৈধ ইটভাটাগুলো এখন মধুমতি নদীর জন্যও হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে মধুমতি নদী।মাগুরা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৯০টি ইটভাটার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০টি রয়েছে বাগবাড়িয়া গ্রামে। জেলায় মোট ৯০টি ভাটার মধ্যে মাত্র ১০টির লাইসেন্স আছে। বাকি ৮০টি ইটভাটা অনুমোদন ছাড়াই চলছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো বন্ধ হয়নি। তাছাড়া বেশিরভাগ ভাটায় সিমেন্টের তৈরি ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের চিমনির বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে স্বল্প উচ্চতার চিমনি, যা আইনগত নিষিদ্ধ।

ভাটা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ইউএনবি প্রতিনিধিকে জানান, জেলার প্রতিটি ভাটায় মৌসুমজুড়ে গড়ে ৫০ লাখ ইট পোড়া হয়। প্রতি এক লাখ ইটে ৮০ টন থেকে ১০০ টন হিসেবে ৯০টি ইটভাটায় প্রয়োজন প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিকটন জ্বালানি কাঠ।

এ ব্যাপারে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তিন ফসলি জমিতে কোনো কারখানা বা ইটভাটা করা যাবে না। বিষয়টি জেলার প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের জানানো হয়েছে। তবে নদী দখল করে ইটভাটা করা ও নদীর মাটি কেটে ইটের ভাটায় ব্যবহার করলেও সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন ফসলি জমিতে যাতে কোনো ইটভাটা গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানালেও নদী দখলের ব্যাপারে কি করা হবে তা জানাননি। তবে অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। সূত্র:ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান