পর্যটন ব্যবসায়ীদের বেপরোয়ায় হুমকির মুখে ‘চর বিজয়ের’ সৌন্দর্য

পর্যটন ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া আচরণে হুমকির মুখে কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা‘চর বিজয়ের’সৌন্দর্য। সাগরের বুকে জেগে ওঠা প্রায় পাঁচ হাজার একর আয়তনের‘চর বিজয়’ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ চরটি শীত মৌসুমে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণে মুখরিত থাকে। এছাড়া অসংখ্য লাল কাঁকড়ার সমাবেশে চরের সিংহভাগ ঢেকে যায় অপূর্ব সৌন্দর্যের রঙিন চাদরে। গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা অসংখ্য লাল কাঁকড়া দেখে মনে হবে যেন মনোরম লালগালিচা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বদৌলতে‘চর বিজয়ের’নাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। প্রকৃতি প্রদত্ত এ আকর্ষণীয় চরটি কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে যোগ করেছে বিনোদনের নতুন মাত্রা। যত বেশি সংখ্যক পর্যটক কুয়াকাটায় আসছেন, স্থানীয় ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো তাদেরকে ওই দ্বীপটিতে নিয়ে যেতে একরকম অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছেন। পর্যটকদের‘চর বিজয়’ভ্রমণে পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা কিংবা বিধি-নিষেধ না থাকায় তাদের কাজটা আরও সহজ করে তুলেছে।

পর্যটকদের আনাগোনায় অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়ার বহরে নেমে এসেছে আতঙ্ক। ফলে কমে যাচ্ছে অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। ‘চর বিজয়’পরিদর্শনে গিয়ে ইউএনবির প্রতিনিধি দেখেন, আনন্দ ভ্রমণে আসা পর্যটকরা পাখি দেখার কৌতূহল নিয়ে পাখির বিচরণ এলাকায় গিয়ে হৈ-চৈ করছেন। পর্যটকদের সাথে নিয়ে যাওয়া সাউন্ড বক্সের তীব্র শব্দ, পাখির বিচরণ এলাকায় স্পিড বোটের আকস্মিক প্রবেশ, হৈ-চৈ আর পাখিদের পেছনে ছুটাছুটির কারণে আতঙ্কিত হয়ে উড়ে যাচ্ছে অসংখ্য অতিথি পাখি। পর্যটকদের উপস্থিতির ফলে ওই চরে ব্যাপকভাবে কমে গেছে অতিথি পাখির বিচরণ।

এমনকি পর্যটকদের অব্যাহত উচ্ছৃঙ্খলতায় লাল কাঁকড়ার উপস্থিতি এখন আর উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যায় না। ২০১৭ সালে সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে জেলেরা চরটি প্রথম দেখতে পান। এরপরই পর্যটকদের মধ্যে এর সৌন্দর্য দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। তখন জেলেরা এর নামকরণ করেন‘হাইরের চর’। পরবর্তীতে পটুয়াখালীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর চরটি পরিদর্শন করেন। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বাঁকানো চন্দ্রাকৃতির ওই চরটির নাম তখন‘চন্দ্রদ্বীপ’প্রস্তাব করা হয়। পরে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটকের দাবির প্রেক্ষিতে বিজয়ের মাসে চরটি দেখতে পাওয়ায়‘চর বিজয়’নাম বহাল থাকে।

বনায়নের উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক আব্দুল বারেক মোল্লার উদ্যোগে চরটিতে বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ রোপণ করা হয়। ‘চর বিজয়’ভ্রমণে আসা পর্যটকরা অতিথি পাখির কলরব আর লাল কাঁকড়ার দুর্লভ দৃশ্য দেখে বিমুগ্ধ হলেও পাখি বিতাড়নের দৃশ্য দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক দম্পতি আকতার ও সীমা বলেন, প্রকৃতির অপার দান‘চর বিজয়’। এ চরের সৌন্দর্য ধরে রাখতে অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়া সংরক্ষণ করা জরুরি।

এদিকে‘চর বিজয়ে’রাত্রিযাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিশ্চিত নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পর্যটকদের ভ্রমণে নিতে শুরু করেছেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা। জলদস্যুদের হামলায় বার বার আক্রান্ত হওয়া জেলে খলিলুর রহমান বলেন, পুলিশ প্রশাসন না থাকলে এখানে রাত্রিযাপন নিরাপদ নয়। ট্যুরিস্ট পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার(কুয়াকাটা জোন)জহিরুল ইসলাম বলেন,‘কোনোভাবেই পর্যটকদের রাতে ওই চরে অবস্থান করতে দেয়া যাবে না। ইতোমধ্যে স্থানীয় ট্যুরিজম বোট মালিকদের পর্যটক নিয়ে ওখানে রাত্রিযাপন না করার নির্দেশ দিয়েছি। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)মো.মুনিবুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়া সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ‘কোনোভাবেই রাতে পর্যটকরা ওই চরে থাকতে পারবেন না। এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান