পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ

এ বছর সার্বিক রফতানি আয় অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ধীর অবস্থায় থাকা স্বত্ত্বেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে উল্লেখ করার মত। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এই খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের,যা গত অর্থবছরের একইসময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি।

বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি ডলারের।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে কাঁচাপাট রফতানি আয় হয়েছে ৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার,পাট সুতা ও কুন্ডলী রফতানিতে আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার,পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের এবং পাটজাত অন্যান্য পণ্য থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।

পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বাসস’কে বলেন, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের জনগন প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়ায় সেখানে পাট পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ নতুন নতুন বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বদেশী পাট পণ্যের কার্যকর ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে পাট ও পাট পণ্য রফতানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

তিনি বলেন,পণ্য বৈচিত্র্যকরণে সরকারি পাটকলগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন সংযোজন করা হচ্ছে তেমনি পণ্য বৈচিত্র্যকরণে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাদের নগদ সহায়তা ও নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে দেশের পাট শিল্পের বেসরকারিখাতের অন্যতম উদ্যোক্তা ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশিদুল করিম মুন্না বাসস’কে বলেন, বিদেশি বাজারে এখন বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে রফতানিও বাড়ছে। বর্তমানে পাট নিয়ে গবেষণা করে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। এসবই রফতানি হচ্ছে। তবে পাটজাত পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে না। যদিও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে মুনাফার হার কমে গেছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন,পরিবেশ সচেতনতা ও সবুজ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পাটের তৈরি শপিং ও ফুড গ্রেড ব্যাগ,কম্পোজিট, জিও-টেক্সটাইল,পাল্প ও কাগজের বিশাল বাজার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোক্তারাও বৈচিত্র্যপূর্ণ বা অপ্রচলিত পাট পণ্য উৎপাদনের প্রতি নজর দিচ্ছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ বর্তমানে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কঙ্গো, কোষ্টারিকা, মিসর, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, জার্মানি, গুয়াতেমালা, হাইতি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইরান, জাপান, জর্দান, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রুমানিয়া, রাশিয়া, সৌদিআরব, সুদান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান, তাজাখস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, উগান্ডা, গুয়াতেমালা, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করছে।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়াত্ত্বখাতে মোট ২২টি পাটকল চালু রয়েছে এবং বেসরকারিখাতে প্রায় ২শ’ পাটকল আছে। চলতি অর্থবছরে পাট ও পাট পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।খবর বাসস।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান