পিনাক-৬ লঞ্চডুবির ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হয়নি

যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল পিনাক-৬ দূর্ঘটনার তিন বছর পার হয়ে গেলেও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হয়নি বলে দাবি করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। বরং প্রহসনের তদন্তের মাধ্যমে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে কালক্ষেপণের অভিযোগও করেছে সংগঠনটি।

শুক্রবার ০৪ আগস্ট রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভভনের ৫ম তলার প্রগতি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল পিনাক-৬ ট্রাজেডি দিবস এবং পবিত্র ঈদুল আযহায় নৌ নিরাপত্তা বিষয়ক কতিপয় দাবি ও সুপারিশ তুলে ধরতে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

আশীষ কুমার দে বলেন, ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার কাছে পদ্মা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমএল পিনাক-৬’নিমজ্জ্বিত হয়ে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। এছাড়া অনেকের মরদেহ-ও খুঁজে পাননি তাঁদের স্বজনেরা। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, সাম্প্রতিককালের সব চেয়ে ভয়াবহ ওই লঞ্চ দুর্ঘটনার তিন বছর পরও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ওই দুর্ঘটনার পর নৌ পরিবহন অধিদফতরের (তৎকালীন সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর হঠাৎ করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ‘সব নৌ দুর্ঘটনা’তদন্তের লক্ষ্যে একটি ‘স্থায়ী তদন্ত কমিটি’ গঠন করায় অধিদফতরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

আশীষ কুমার দে বলেন, দুর্ঘটনার পর অভ্যন্তরীণ নৌ-নিরাপত্তা নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে নৌ মন্ত্রণালয় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন স্থায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করলেও শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ওই কমিটি। দুর্ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটন এবং তদন্তে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে কমিটিতে পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, নৌযান মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি, নৌ পরিবহনবিষয়ক গবেষক ও পরিবেশবিদ রাখার যৌক্তিতা থাকলেও তাঁদের কাউকেই রাখা হয়নি স্থায়ী কমিটিতে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্বার্থে পিনাক-৬ দুর্ঘটনার সঠিক কারণ উদঘাটন, দায়ীদের শনাক্ত করতে হবে ও ভবিষ্যতে নৌ-দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ তৈরিতে বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং সিটিজেন্স রাইটস মুভমেন্টের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়েছিল। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেছিলেন। তবে রুলের জবাব দিতে বিবাদীদের অহেতুক গড়িমসি এবং রাষ্ট্রপক্ষের অহেতুক কালক্ষেপনের কারণে জনস্বার্থবিষয়ক মামলাটি ঝুলে আছে।

আশীষ কুমার দে বলেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে লঞ্চ দুর্ঘটনা সহনীয় মাত্রায় নেমে এসেছে এবং সর্বশেষ ঈদুল ফিতরসহ গত দুই বছরে নৌপথে উল্লেখযোগ্য কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও নিকট ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটবে না- এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেন না। সে কারণে নৌ নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিশেষ করে ভরা বর্ষাসহ দুর্যোগ মৌসুমে ঈদ উদযাপিত হলে এই শংকা বহুগুণ বেড়ে যায়। গত ৩-৪ বছরের মতো এবারো দুর্যোগ মৌসুমে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। ফলে আসন্ন ঈদে ঘরমুখী মানুষের নৌপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং দুর্ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলের আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়াই যথাযথ।

সংগঠনটির পক্ষে পিনাক-৬ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিশেষজ্ঞসহ কমিটি গঠন ও প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, দুর্ঘটনায় নিহতদের জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি প্রদান, নিখোঁজদের তালিকা করে তাদের ‘মৃত’গণ্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নৌপথে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনের মতো নয় দফা দাবি প্রদান করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক পরিচালক এমদাদুল হক বাদশা, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, সাবেক সাংসদ এডভোকেট তাসনিম রানা, জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল ও সেকেন্দার হায়াৎ, অর্থ সম্পাদক পুষ্পেন রায়, প্রচার সম্পাদক জসি সিকদার প্রমুখ।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৫ আগস্ট ২০১৭