পীরগঞ্জে কীটনাশক ছাড়াই সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা কীটনাশক ছাড়াই এখন সবজি চাষ করছেন। এলাকার কোন কৃষক এখন আর সবজি চাষে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন না। কীটনাশকের পরিবর্তে তারা সেক্সফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে যেমন কীটনাশক ক্রয়ের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশ বান্ধব ছাড়াও উৎপাদিত হচ্ছে কীটনাশকমুক্ত সবজি। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে আবাদকৃত উচ্চ মূল্যের সবজি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমোটো, বেগুনের কোন জমিতেই বালাইনাশকে কীটনাশন ব্যবহার হচ্ছে না। পাশাপাশি তারা সার হিসেবে জৈব ও ভার্মি কম্পোষ্ট ব্যবহার করছেন। প্রচলিত ধান চাষের জমিতে সবজি চাষ তুলনামুলক অনেক বেশী লাভ জনক হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। এতে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সামর্থ হয়েছেন। সবজি আবাদের জমিতে জৈব সার ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরা শক্তি সুরক্ষা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মাটিতে উপকারী অনুজীবের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম তার১৫ শতাংশ নিচৃু জমিতে গত জুলাই মাসে পানি থাকার কারণে জৈব সার মাটিতে মিশিয়ে বস্তায় ভরে উপরে বীজ বপন করেন। একটিন বস্তা হতে অপরটির দূুরত্ব রাখেন ২ মিটার। গোটা জমিতে ৭৫ বস্তায় এভাবে “লাল তীর ডায়ানা” জাতের লাউ বীজ বপনের পর উপরে বাঁশের মাচা দেন। ৬০ থেকে ৬৫ দিন পর প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু করে। গাছে ফুল আসার পর পরই এলাকার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসুজ্জামানের পরামর্শে জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ(লিউর) স্থাপন করেন। ২ সপ্তাহ পর প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু করে।

প্রতি সপ্তাহে ওই জমি থেকে ২’শ থেকে ২’শ ৫০ টি পর্যন্ত লাউ পাওয়া গেছে। যা বিক্রিলব্ধ অর্থের পরিমান দাঁড়ায় প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। গত ৪ মাসে তিনি ১৫ শতক জমিতেই অর্ধলক্ষ টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। পৌরসভা এলাকার তুলারাম মজিদপুর গ্রামের আবুল হোসেন ,ইয়াকুব আলী, রেজাউল করিম ও লাউ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। রামনাথপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের কিষাণী শরীফা বেগম,পীরগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের মমতাজুর রহমান,রাখু মিয়া ওই পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

রায়পুর ইউনিয়নের নখারপাড়া গ্রামের রেজাউল করিমই নন। কাবিলপুর ইউনিয়নে শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান একই পদ্ধতিতে শিম চাষ করেই বেশ লাভবান হযেছেন। রায়পুর ইউনিয়নের দাড়িকাপাড়া গ্রামের ১১ জন কৃষক লাউ,টমোটো ও শিমের আবাদ করেছেন অভিন্ন পদ্ধতিতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন-নতুন এ পদ্ধতিতে উচ্চ মূুল্যের সবজি চাষ করে কৃষকরা অনেকেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। এলাকার কৃষকদের মাঝে এ বস্তা-মাচা পদ্ধতি জনপ্রিয়তা লাভ করা অনেকই নতুন করে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান