বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

‘সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনতে সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হবে’

পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম দূর করে সুশাসন নিশ্চিতে আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।  যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, মিসম্যাচ আছে, সেগুলো আমরা টেককেয়ার করে পুঁজিবাজারকে আমাদের অর্থনৈতিক এলাকায় শক্তিশালীভাবে রূপান্তরিত করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়াও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে  বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

আজ ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়েজিত ‘পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের সাথে সমতবিনিময়’ সভায় এ আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এসময় তিনি অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজ আমাদের পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনা করার জন্য আমাদের সব বিশেষজ্ঞ, যারা পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, পুঁজিবাজার নিয়ে চিন্তা করেন, তাদের আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এই আলোচনা থেকে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পরবর্তীতে আমরা আরেকটি সভা করব, সেখানে এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের মার্কেট ফান্ডামেন্টাল অনেক বেশি শক্তিশালী, পুঁজিবাজারকেও আমরা সেখানে দেখতে চাই।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা ভালোভালো কোম্পানি, বিশেষ করে সরকারি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করবো। এবং কোম্পানিগুলো যাতে সঠিক দর পায়, সেই কাজটা আমার করবো। যাতে আইপিওতে দর অতি মূল্যায়িত না হয়। ফলে পরবর্তীতে কোন শেয়ারের দর অতি মাত্রায় কমে বাজার পরিস্থিত যেনো খারাপ না হয়। সে জন্য আমরা বিশেষ কমিটি করে দিয়েছি। এই কমিটি সারা বছর পর্যবেক্ষণ করবেন। কমিটি তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলো কার্যক্রমে আছে, নাকি বন্ধ হয়ে গেছে, কোম্পানিগুলোর অবস্থা কেমন ইত্যাদি দেখবে।

কমিটির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, একটি ইন্টারনাল অডিট ডিভিশন করা হবে। যথাযথভাবে শেয়ার দর নির্ধারন করা হচ্ছে কিনা, বিষয়টি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলসহ (এফআরসি) ওই ডিভিশন দেখবে। আলোচনায় দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকা কোম্পানির কথা উঠে এসেছে। কিন্তু ওইসব কোম্পানির শেয়ার বেচা-কেনা হচ্ছে। যেগুলোর কারখানা বন্ধ, সেসব কোম্পানির শেয়ার কিভাবে বেচা-কেনা হয়? এ বিষয়টিও কমিটি দেখবে। এছাড়া প্রত্যেকটি আইপিওর আর্থিক হিসাব কমিশন যথাযথভাবে দেখবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন,কারখানা বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোর বিষয়টি এফআরসি চেয়ারম্যান কালকে থেকেই দেখবেন। একইসঙ্গে যতগুলো তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে, সেগুলো তিনি টিমের মাধ্যমে দেখবেন। আমরা বাজারে আইপিও আনবো। আইপিওগুলো যাতে যথাযথ ভেলুতে আসতে পারে, সেদিকেও আমরা নজর দিবো। বাজারের সাথে দেশে সকল মানুষ যারা বাজারকে নিয়ে চিন্তা করে তাদেরকে আমরা বাজারে আনবো।

তিনি বলেন, আমরা সবার সহযোগিতা এবং সহায়তায় আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চাই। অর্থনীতির মৌলিক এলাকা হচ্ছে শেয়ারবাজার। সুতরাং এই মৌলিক এলাকাকে আমরা কখনো অবহেলা করতে পারি না। আমাদের সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অনেকবার বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জানেন এই বাজারের সাথে আমাদের মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা জড়িত আছেন। সুতরাং সবার জন্য এই শেয়ারবাজার। এই কারনে শেয়ারবাজার সবসময় আমাদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করে। শেয়ারবাজারকে নিয়ে আমরা সব সময় সতর্ক অবস্থানে থাকি। যাতে করে শেয়ারবাজারে যারা ব্যবসা করতে আসে তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

মুস্তফা কামাল বলেন, সভায় আমরা নিজেদের মধ্যে বাজারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আরও কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। এরপরে শেয়ারবাজারের জন্য করণীয় কাজগুলো দ্রুত করা হবে। আলোচনা সভায় সবাই একমত হয়েছে যে, শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ছাড়া আমাদের সামনে আরো কোনো চিন্তা নাই। শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য সরকার যেটুকু সহায়তা দিতে পারে, তা দেবে। সরকারের বিভিন্ন ডিভিশনের সবাই ঐক্যমতে পৌছেছি যে, আমরা আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবো।

মন্ত্রী বলেন, আলোচনায় শেয়ারবাজারের জন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা উঠে এসেছে, সেগুলো দূর করা হবে। যাতে বাজার একটি অবস্থানে আসতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী হয়। এসময় তিনি বলেন, সবাই জানেন দেশের অর্থনীতির গতি কতটুকু। আমার বেশি কিছু আশা করি না। শুধুমাত্র অর্থনীতি যতটুকু গতিশীল, শেয়ারবাজারকে ততটুকু গতিশীল দেখতে চাই।

তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় বোঝা গেছে কিছু বিষয়ে বিশ্বাস অবিশ্বাস জন্মেছে। এর পেছনে কয়েকটি কারনের মধ্যে রয়েছে- ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসছে না। সেগুলোকে বাজারে আনার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি যথাযথ দামে আসার বিষয়টি দেখতে হবে। আর সুশাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সুশাসন নিশ্চিত করব। যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে যেই হোক না কেনো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করব। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে জনগনের আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যাতে ভবিষ্যতে আমাদেরকে সুশাসন কোনভাবেই দোষারোপ করতে পারবেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকারী কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসবে, সেটা আমি আপনাদেরকে বলতে পারি। তবে এগুলোকে আনতে সময় দিতে হবে। কারন আপডেটেড আর্থিক হিসাব তৈরী করতে হবে। এখন কোম্পানির সব সম্পদ মূল্যায়ন করে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সময় লাগবে। তবে নতুন কোম্পানিগুলোর অনুমোদনের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তির শর্ত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং সরকারী কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসার বিষয়ে সবাই নিশ্চিত থাকেন।

২০০৫ সালে সরকারী কোম্পানি আনা হবে বলে ঘোষণা দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পুরাতন কথা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। আগে যা হওয়ার হয়েছে। এখন আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীও সিরিয়াস। উনি চাচ্ছেন সরকারী কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসুক। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে আসুক সেটাও চান। তাই আমরা মনে করি না, প্রধানমন্ত্রীর বাহিরে গিয়ে কেউ এ বিষয়ে বিরোধিতা করবে না।

অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ওইসব কোম্পানিগুলোকে ধরা হবে। এর সাথে জড়িতদের মাফ করা হবে না।

মত বিনিময় সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আয়োজিত সভায় অর্থ সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন ও কমিশনারগন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেম ও পরিচালকবৃন্দ, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালি, অগ্রণী, জনতা ও রূপালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সভাপতি শাকিল রিজভী ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও আইসিবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ।

 

আজকের বাজার/মিথিলা