পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী। অন্যদিকে, পোল্ট্রি শিল্পে বর্তমানে বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)-এর সভাপতি মসিউর রহমান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ এখাতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দেশে বার্ষিক ডিম উৎপাদন ছিল ৬৩৯ কোটি, ২০১৫ সালে ৭১২ কোটি এবং ২০১৬ সালে ডিম উৎপাদন ছিল ৮২১ কোটি। ২০২১ সাল নাগাদ বার্ষিক ডিমের চাহিদা দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কোটি।
বিপিআইসিসি সভাপতি বলেন, আমদানি নির্ভরত কাটিয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। এই খাতে নিরব বিপ্লব হয়েছে। আশির দশকে এই খাতে বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ১ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে।
দেশে মুরগির মাংসের উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে উল্লেখ করে মসিউর রহমান জানান, মুরগীর মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৪ সালে ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬ সালে ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে দেশে মুরগির মাংসের চাহিদা হবে প্রায় ১২.৫ লাখ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, আগে ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি আমদানি করতে হতো। এখন তা শূন্য। আগে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতে হতো। আগে গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ফার্ম ছিল না পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। এখন বাংলাদেশে ৭টি ‘গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক’ (জিপি) ফার্ম আছে। আর ‘প্যারেন্টস্টক’ বা পিএস ফার্মের সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০টি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়েই দেশের হ্যাচিং ডিমের শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
মসিউর রহমান আরও জানান, আগে আধুনিক ফিড ইন্ডাস্ট্রি বলে কিছু ছিল না বিধায় শতভাগ প্যাকেটজাত ফিড আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে প্যাকেটজাত ফিড আমদানি করতে হয় না। দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমেই শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় ১৮৬টি ফিডমিল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে আধুনিক এবং নিবন্ধিত ফিড মিলের সংখ্যা প্রায় ৭০টি।
বিপিআইসিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে (২০১৭) পোল্ট্রি ফিডের বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ফিড মিলে উৎপাদিত হচ্ছে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ ফিড।আগে পোল্ট্রি শিল্পে প্রয়োজনীয় ভুট্টার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হতো। এখন চাহিদার প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ ভুট্টা দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। চালের কুঁড়া বা রাইস পলিসও দেশীয়ভাবে পাওয়া যাচ্ছে।
আগে দেশীয়ভাবে হাঁস-মুরগির তেমন কোনো ওষুধ তৈরি হত না। পুরোটাই ছিল আমদানি নির্ভর। কিন্তু এখন প্রায় ৩০টি কোম্পানী দেশীয়ভাবে বিভিন্ন ওষুধ তৈরি করছে। ফলে আমদানি নির্ভরতা কমতে শুরু করেছে।
বিপিআইসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে জনপ্রতি মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমাণ বছরে মাত্র সাড়ে ৪ কেজি। অথচ উন্নত বিশ্বের মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ৪৫-৫০ কেজি মুরগির মাংস খেয়ে থাকে।
এফএওর মতে জনপ্রতি নূন্যতম ডিম খাওয়া উচিত বছরে ১০৪টি। উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২২০টির মত ডিম খাওয়া হয়। জাপানে জনপ্রতি ডিম খাওয়ার পরিমান বছরে প্রায় ৬০০টি। অথচ বাংলাদেশে বছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার হার বর্তমানে প্রায় ৭০টি। অনুরূপভাবে, মাছ ও মাংস মিলে বছরে প্রাণিজ আমিষ খাওয়া দরকার বছরে অন্ততঃ ২৫ থেকে ৩০ কেজি। কিন্তু বাংলাদেশে এর হার প্রায় ২৩ কেজি (মাংস ৮ কেজি, ১৫ মাছ)।


বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)-এর সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পোল্ট্রি শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মুরগির ডিম ও মাংসই প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা।
বিপিআইসিসি মুরগির ডিম ও মাংসকে অধিকতর নিরাপদ করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবশ্রেণীর মানুষের জন্য পোল্ট্রি সামগ্রীকে সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যসম্মত করতে গিয়ে আমাদের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
পোল্ট্রি খাতের উপর থেকে কর ও শুল্ক হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু কনজ্যুমার এবং কনজাম্পশন দুইটাই বাড়াতে চাই, তাই দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
তিনি এ শিল্পের ওপর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সব ধরনের কর ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা ও আগ্রগতি সম্পর্কে আশা প্রকাশ করে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আইনুল হক বলেন, সরকারের সহায়ক ভূমিকার কারণে গত একদশকে পোল্ট্রি খাত শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এই শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে। বেকারত্ব দূরীকরণে এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এ খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, পোল্ট্রি উদ্যোক্তাদের বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পোল্ট্রি উপকরণ আমদানিতে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে।
পোল্ট্রি ও প্রাণীসম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘ডিআরএমডি’ প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
*২০২১ সাল নাগাদ এখাতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে
* ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দেশে বার্ষিক ডিম উৎপাদন ছিল ৬৩৯ কোটি, ২০১৫ সালে ৭১২ কোটি এবং ২০১৬ সালে ডিম উৎপাদন ছিল ৮২১ কোটি। ২০২১ সাল নাগাদ বার্ষিক ডিমের চাহিদা দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কোটি।
*মুরগীর মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৪ সালে ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৫ সালে ৫ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬ সালে ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে দেশে মুরগির মাংসের চাহিদা হবে প্রায় ১২.৫ লাখ মেট্রিক টন।
* নিরব বিপ্লব হয়েছে। আশির দশকে এই খাতে বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আজকের বাজার : সালি / ১৫ নভেম্বর ২০১৭