প্রতিকূলতার মাঝেও অগ্রাধিকার ভিত্তিক মেগা প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে : সড়ক পরিবহন মন্ত্রী

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশে উন্নয়ন কাজে কিছুটা বাধা এলেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি ফিরেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘শত প্রতিকূলতার মাঝেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল রুট-৬, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে।’
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আজ রোববার তার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার উন্নয়নমুখী সরকার। জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তায় চলমান উন্নয়ন প্রবাহ ধরে রেখেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সচেষ্ট। উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। গত দুই-তিন মাসে কিছু প্রকল্পের সীমিত আকারে কাজ হয়েছে। এখন সব কাজ চলছে পুরোদমে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শত প্রতিকূলতার মাঝেও থেমে থাকেনি। ইতোমধ্যে ৩১টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০ মিটার। ৩০ জুন পর্যন্ত মূল সেতুর শতকরা ৮৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নদীশাসন কাজ শেষ হয়েছে শতকরা ৭৩ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
জাইকার অর্থায়নে নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল রুট-৬-এর কাজ এগিয়ে চলেছে বলে উল্লেখ করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রকল্পে কর্মরত জনবলের কোভিড-১৯ পরীক্ষা শেষে কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় অবস্থান নিশ্চিত করতে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক স্থাপনা। ইতোমধ্যে দুটি ফিল্ড হসপিটাল নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে বারো কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে রেললাইন। একসেট ট্রেন নির্মাণকাজ জাপানের কারখানায় সম্পন্ন হয়েছে। আরও চার সেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে জাপান থেকে জলপথে ট্রেনগুলো নিয়ে আসা হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। করোনার শুরুর দিকে কিছুটা থমকে গেলেও এখন পুরোদমে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তল দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাকালে থেমে থাকেনি নদীর খনন কাজ ইতোমধ্যে দুই দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টিউবের দুই দশমিক ৩ কিলোমিটার খনন শেষ হয়েছে। সম্প্রতি টানেলের অন্যান্য কাজেও পূর্ণ গতি ফিরে এসেছে। এ প্রকল্পের এ পর্যন্ত অগ্রগতি শতকরা ৫৬ ভাগ।
তিনি বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ঢাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ গতি ফিরে পেয়েছে। করোনার আঘাতে প্রথমদিকে কাজ সীমিত পর্যায়ে চললেও এখন কোন গতি পেয়েছে। ইতোমধ্যেই এ প্রকল্পের ফান সংকট দূর হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। সীমিত পরিসরে চলছে। চীনা ঠিকাদারের কিছুটা সমস্যা দেখা দেওয়ায় ইতোমধ্যে আমরা চীনা দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছি। তবে এ প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর-ঢাকা করিডোরের দ্রুত মেরামত কাজ শেষ করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের চারলেনে উন্নীতকরণের সকল বাধা পেরিয়ে আশার মুখ দেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি এডিবি এ প্রকল্প অর্থায়নে চূড়ান্ত সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। এডিবির নিজস্ব বাজেটে অর্থায়ন অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমানে নকশা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। শীঘ্রই প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হবে।
পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, গত দুই-তিন মাসে সেতুর নদীর মধ্যবর্তী অংশের কাজ চলেছে সীমিত পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ২০০ শ্রমিকের জন্য প্রকল্প এলাকায় বাসস্থান নির্মাণের ফলে নির্মাণকাজ গতি সঞ্চারিত হয়েছে। এ প্রকল্পে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি মূলসেতুর ৬৫% এবং পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৫৯ শতাংশ।
তিনি বলেন, ভারতীয় ঋণ কর্মসূচির আওতায় আশুগঞ্জ নদীবন্দর হতে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান। তিনটি প্যাকেজে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজের কাজ চলছে। অপর প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি সংযোগ সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। বিদেশি জনবল কর্মরত থাকায় সাময়িক বন্ধ শেষে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের অগ্রগতি ২৪ শতাংশ।
এডিবির অর্থায়নে প্রায় ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যায়ে গাজীপুর এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মহাসড়কের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। প্রকল্পটির প্রায় ৮২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত প্রায় ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ সম্প্রতি অগ্রগতি পেয়েছে। অতিসম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দেয় কিছু স্থানে কাজে সমস্যা হলেও অন্য প্যাকেজগুলো কাজ চলছে। এগারটি প্যাকেজের মধ্যে এরই মাঝে সাতটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ কাজে গতি সঞ্চার হয়েছে। গত দুই-তিন মাসের সীমিত পর্যায়ে কাজ চললেও বর্তমানে কাজ চলছে পুরোদমে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ ভাগ ভৌত কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া সড়ক ও সেতু বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কাজ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালন করে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন। করোনার আকস্মিক স্থবিরতা কাটিয়ে এরই মাঝে উন্নয়নকাজের কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে বলেও জানান মন্ত্রী।