প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ অর্জনে ফেনীতে চলছে ইএসডিপি’র প্রশিক্ষণ

বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে‘উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন- ইএসডিপি’প্রকল্পের আওতায় ফেনীতে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের ধারণাপত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ এর অন্যতম উদ্যোগ‘বিনিয়োগ বিকাশ’এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে।

প্রকল্প প্রসঙ্গে ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান জানান, আমাদের দেশের লোকসংখ্যা যেহেতু বেশি এবং বড় বড় প্রকল্প করার সামর্থ্য সবার নেই। ছোট ছোট প্রকল্প নিয়ে অনেকে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তার নিজেকে একজন যোগ্য এবং দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজেকেই স্বাবলম্বী করবে না, আশপাশের মানুষেরও কাজের ব্যবস্থা করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ‘বিনিয়োগ বিকাশ’সফলতায় এ প্রকল্পের ভূমিকার সম্ভাব্যতা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, অনেকের কাছে ছোট ছোট পুঁজি রয়েছে যা অলস পড়ে থাকে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন মানুষ একজন সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারে। একটি সফল উদ্যোগ শুধু ব্যক্তির নয়, দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে।

প্রকল্পের ফেনী অফিসের ম্যানেজার কো-অর্ডিনেটর ও মাস্টার ট্রেইনার মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতি মাসে ২৫জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ এক মাস। ১৫ মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেনীতে মোট ৩৭৫ জন উদ্যোক্তাকে প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তিনি জানান, চলতি ডিসেম্বরের ১ তারিখ হতে তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, ১৮ থেকে ৪৬ বছর বয়সী এবং নুন্যতম উচ্চ মাধ্যমিক পাস যে কেউ এ প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবে। তিনি বলেন, ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামানের সভাপতিত্বে বাছাই কমিটি আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করার নিয়ম রয়েছে।

উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ব্যবসার প্রয়োজনীয় লাইসেন্স সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য রাখেন না। এদের ব্যবসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। ফলে কখনো কখনো দেখা যায় আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও বড় রকম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় সৃষ্টিশীল ব্যবসায়িক চিন্তাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, পাটের আঁশ থেকে কালি তৈরি, স্বল্প খরচে ইটের ব্লক তৈরির উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

বিআইডিএ’র এ প্রকল্পে দেশের জেলাসমূহের সম্ভাবনাময় খাত চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন জানান, ফেনীতে পরিবহন এবং সমন্বিত কৃষি খাতকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ে ধারণাপত্র হতে জানা যায়, এ প্রকল্প একটি বড় কোম্পানীর সাথে ছোট ছোট কোম্পানীগুলোকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে ইসমাইল হোসেন বলেন, একটি বড় ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন ধরণের কাঁচামাল অথবা ব্যাকওয়ার্ড পণ্যের প্রয়োজন হয় যা ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে থাকে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি পণ্য সরবরাহে সম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম ভূঞা বলেন, প্রশিক্ষণ নেবার পরে উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্পর্কে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। এ প্রশিক্ষণ নেয়ার ফলে আমার প্রকল্পে যে ভুলগুলো ছিল তা শুধরে নেবার সুযোগ হয়েছে। সমন্বিত কৃষি খামার নিয়ে আমি প্রকল্প উপস্থাপন করেছি। বিনিয়োগ সহযোগিতা পেলে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারব।
প্রকল্পের উপকারভোগী কলেজ শিক্ষক সৈয়দ হাবিবুল হক বলেন, এটি একটি দিক নির্দেশনামূলক প্রকল্প। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি উদ্যোগকে সফল রূপে রূপায়ন করা সম্ভব।

প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থার সাথে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। কোন একটি প্রকল্প ইনোভেটিভ হলে এবং তাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণদানে আগ্রহী হলে উভয়ের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ প্রকল্প কাজ করবে। তিনি জানান, ফেনী হতে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রস্তাবনা এ প্রকল্পের বিনিয়োগ কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হবে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে বিনিয়োগ পরিকল্পনা কমিটি সম্ভাবনাময় প্রস্তাবনাগুলোকে প্রকল্প অফিস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করবে।

উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি জানান, এ প্রকল্প উদ্যোক্তাদের কোন আর্থিক সহযোগিতা করবে না তবে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে ঋণ অথবা আর্থিক সাহায্য পেতে দাতা সংস্থার নিকট সুপারিশ করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রকল্প পরিচালকের বরাত দিয়ে বলেন, উদ্যোক্তারা সুদ ছাড়া বা স্বল্প সুদে যাতে ঋণ পেতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একজন উদ্যোক্তা মোট প্রকল্প ব্যায়ের সর্বোচ্চ ৪০% ঋণ পাবার সুযোগ রয়েছে এবং সুদের হার সর্বনিম্ন হবে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান