প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে এসডিজি বাস্তবায়ন গুরুত্ব পাবে : মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন আজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরকালে এসডিজি বাস্তবায়নে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরবেন, সেখানে তিনি পশ্চিম এশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্দেশনা দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফরের বিষয়ে আজ সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সফরকালে প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগগুলো সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের অবহিত করার সুযোগ পাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী ‘আবুধাবি সাসটেইনেবল উইক’ এবং ‘জায়েদ সাসটেইনেবল অ্যাওয়ার্ডস্ সেরিমনি’ তে অংশ নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনদিনের সরকারি সফরে আজ বিকেলে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য ‘ভিশন-২০৪১’ অর্জনের লক্ষ্যে জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, পানি এবং জৈব-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বিশদ পর্যালোচনা করবেন।

মোমেন বলেন, সফরকালে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুক্তিগুলো হলো- ‘আমিরাত ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সংশোধনী এবং ঢাকায় দূতাবাস নির্মাণে বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক এনক্ল্যাভে জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকার ও আরব আমিরাত সরকারের মধ্যে চুক্তির সংশোধনী প্রটোকল সমঝোতা স্বাক্ষর।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই সফরের সময় রাষ্ট্রদূতের সম্মেলনে যোগ দেবেন সেখানে বাহরাইন, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতগণ অংশ নেবেন।
সম্মেলনে মোমেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার ভূমিকা সম্পর্কে বাংলাদেশ দূতদের নির্দেশনা দেবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান সর্বদা শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে এবং তার মূল কূটনৈতিক লক্ষ্য অনুসরণ করে- সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। ‘যুদ্ধ কোনও সমাধান নয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে স্থিতিশীলতা, শান্তি ও জাতীয় অখন্ডতা দেখতে চায়।

মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে কীভাবে তারা বাংলাদেশের আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারেন সে বিষয়ে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সম্পর্কিত পশ্চিম এশিয়ার বাংলাদেশ মিশনের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করবেন।

মোমেন বলেন, ১৪ জানুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এবং আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতির স্ত্রী শেখা ফাতিমা বিনতে মোবারক আল কেতবির সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
মোমেন আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সফর তেল সমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও সেক্রেটারি (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট আজ বিকেল প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবুধাবির উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

ফ্লাইটটি আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে অবতরণ করার কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ ইমরান প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে দুবাইয়ের শাংরি-লা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। ইউএই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।

শেখ হাসিনা ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায় আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টার (এডিএনইসি) এর আইসিসি হলে ‘আবুধাবি সাসটেইনেবল উইক’ এবং বেলা ১২টায় ‘জায়েদ সাসটেইনেবল অ্যাওয়ার্ডস সেরিমনি’তে যোগ দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর হোটেলে আয়োজিত রাষ্ট্রদূতের সম্মেলনে যোগ দেবেন।

১৪ জানুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী এডিএনইসি’র হল-১১-তে আয়োজিত ‘দ্য ক্রিটিক্যাল রোল অব উইমেন ইন ডেলিভারিং ক্লাইমেট অ্যাকশন’ সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার অধিবেশনে যোগ দিবেন।
ইউএই-তে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ১৪ জানুয়ারি দেশে ফিরবেন।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান