‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ প্রয়োজন’

মঈন উদ্দিন : অনেকগুলো কারনে আমাদের পুঁজিবাজারে এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে ।খুব বেশি সময় না হলেও প্রায় দুই মাস যাবৎ বিভিন্ন ঘটনার কারনে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। প্রথমত মানি মার্কেটের ক্রাইসিস। মানি মার্কেটের অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার রয়েছে, কমার্শিয়াল ব্যাংক, বিমা, লিজিং, ফাইনান্স কোম্পানী এর মধ্যে আমরাও স্টেকহোল্ডার হিসেবে অন্যতম। এক্ষেত্রে  বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারিও বড় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। এই সবগুলো মিলেই মানি মার্কেট। মানি মার্কেটের ক্রাইসিস মূলত বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তেমন নাই। একটা রেশিও আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ডিপোজিটের ২৫ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখতে পারবে। আর সরকারি ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিটের ৭৫ ভাগ রাখতে হবে।

এক পাশে অনেক তারল্য অন্য পাশে তা নেই, তাহলে আমরা কি এটা কে তারল্য সংকট বলতে পারি? না এটা কে তারল্য সংকট বলা যায় না। এখন সরকার যদি বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডিপোজিটের ২৫ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ রাখার সুযোগ করে দেয় তাহলেই দেখা যাবে এই সংকট থাকবেনা। বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও যথেষ্ট টাকা থাকবে। অন্য দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার এডি রেশিও পরিবর্তন করে দিয়েছে। যার কারনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কমপ্লায়েন্স মানতে গিয়ে বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো একটা চাপের মধ্যে পরে গেছে। যে কারনে আজকে ডিপোজিটের সুদের হার ১০ শতাংশের উপরে চলে গেছে। লেন্ডিং রেট চলে গেছে ১২/১৩ তে। তাহলে এইভাবে চলতে থাকলে ইকনোমিতে একটা নেগেটিভ প্রভাব পরবে।

আমরা যারা ব্যবসা করি তারাও এতো প্রফিট করতে পারিনা। যারা লিস্টিং কোম্পানী আছে তারা যদি প্রফিট করতে না পারে তবে আর্নিং দেখাবে কিভাবে? সরকার যদি এই জায়গাটাতে হস্তক্ষেপ করে তাহলে আমার মনে হয় এই সংকট দূর করা খুব কঠিন কিছু না। বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সবাই মিলে যৌথ উদ্যোগে এই সমস্যা সমাধান করা উচিৎ। সবার সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। এই বছর নির্বাচনী বছর যেটা আমরা সবাই জানি। সাধারন মানুষের ধারণা থাকে এই সময় সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন দেখাবে। যেখানে পুঁজিবারের ও একটা উন্নয়ন দেখতে চায় দেশের সাধারন মানুষ।

এর মধ্যে আরো রাজনৈতিক কিছু ঘটনা ঘটেছে যদিও কিছুই হবেনা মার্কেটের।কিন্তু দেশের ইকনোমিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তবে রাতারাতি কোনো কিছু পরিবর্তন হবেনা। একটা রাজনৈতিক ইস্যুতে দেশের পুরো অর্থনীতি অচল হয়ে যাবে এমনটা মনে করার কোন কারন আছে বলে আমি মনে করিনা।

আরেকটা ইস্যু তৈরি হয়েছে নতুন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে। কেউ মনে করে ডিএসই দিতে চায় চায়নাকে দিতে আর সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন চায় ভারতকে দিতে। এটা আসলে একটা ভ্রান্ত ধারনা। কে কাকে দিতে চায় সেটা বড় বিষয় না।ডিএসই চায়নাকে সিলেকশন করে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর কাছে পাঠিয়েছে। তারা যাচই বাঁচাই করে দেখবে সবকিছু কমপ্লায়েস্ন মেইন্টেন করছে কিনা? আইন কানুন মেনে সব ঠিক ঠাক থাকলে রিপ্লাই পাবে। এখানেতো কমিশনের কিছু করার নাই।মার্কেটের নেতিবাচক অবস্থার জন্য এটাকে দায়ী করা ঠিক নয়। আমাদের দেশের পলিসি এতো দ্রুত পরিবর্তন হয়! যার কারনে আস্থার অভাব দেখা যায়।

দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অনেক অবদান আছে। তবে মার্কেটের এই অবস্থা থাকলে তো এখানে ভালো কোন ইস্যু আসবেনা।কারন এই অবস্থায় আসলে তো ভালো রেট পাবেনা। মার্কেটের আস্থা যদি নষ্ট করে ফেলে তাহলে পুঁজিবাজারের দীর্ঘসময়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো সবসময় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয়। কিন্তু এখন উল্টা আচরণ করছে। আইসিবি এখন বিক্রেতার ভুমিকায়। যার কারনে সাধারন বিনিয়োগকারীরা এখন সবাই বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে বাজারের প্রতি আস্থার অভাব দেখা দিবে। তাতে দেশর পুঁজিবাজার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। মার্কেটকে ভালো রাখতে হলে, বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে, বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে, সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।সবার সমন্বয় থাকতে হবে, শক্তিশালী পলিসি সাপোর্ট থাকতে হবে। তাহলেই এই সংকটের সমাধান আসবে এবং বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরবে।

মঈন উদ্দিন
পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড।

এমআর/