ফরিদপুরে ৭৫ শতাংশ বহুতল ভবনের বৈধ অনুমোদন নেই

ফরিদপুর জেলায় গত এক যুগে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ বহুতল ভবনের বৈধ অনুমোদন নেই।

মালিকেরা সরকারি ভবন নির্মাণ বিধি না মেনেই নিজেদের খেয়াল খুশি মতো তৈরি করছে ভবনগুলো। এতে এ সকল ভবনে বসবাসরত মানুষেরা রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।

বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করাসহ ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলার বিধান রয়েছে। কিন্তু ফরিদপুর শহরের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের মালিকেরা এসব নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছেন।

রাজধানী ঢাকার বনানীর ট্রাজেডির পর থেকেই শহরের বহুতল ভবন নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। এদিকে জেলা প্রশাসন বলছে সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য করা হবে অবৈধ ভবন মালিকদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র নীলটুলি, ঝিলটুলি, জনতা ব্যাংক মোড়, খাবাসপুর, লক্ষিপুর, আলীপুরসহ যেদিকে চোখ যায় সেদিকে রয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন। বহুতল এই ইমারতগুলো গড়ে উঠেছে সরকারি নিয়মকানুন না মেনেই। সেই সঙ্গে অধিকাংশ ভবনে নেই ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা।

অপরদিকে পৌরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা নকশা অনুমোদন করলেও নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কোন তদারকি করে না।

এ বিষয়ে ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু জানান ‘বর্তমানে পৌরসভা থেকে ভবন নির্মাণে যে নকশার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তা সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকে। তবে বিল্ডিং কোড আইন ঘোষণার আগে যে সকল ভবন হয়েছে তা এই আইনের আওতায় নেই।’

অভিযোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল না থাকায় সঠিক তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না, তারপরেও চেষ্টা করছি সকলকেই নিয়মের মধ্যে আনতে।’

ফরিদপুরের নারী নেত্রী আসমা আক্তার মুক্তা বলেন, ‘শুধু আমরা নই, অনুমোদন ছাড়া তৈরি করা ভবন মালিকরাও কিন্তু জীবনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এ বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা দরকার প্রশাসনের।’

ফরিদপুরে শাহ ফরিদ রিয়েল স্টেটের মালিক ওমর আলী খান এ প্রসঙ্গে অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা ছাড়া কোনো সরকারি দপ্তরের ফাইল ছাড়া হয় না। সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যদি আমাদের বাধ্য করে বিল্ডিং কোড মানতে তা হলে আমরা কেন তা করবো না।’

তিনি আরও বলেন ‘আমরা যারা ডেভেলপার কোম্পানি তারা সকলেই চেষ্টা করছি সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করতে। তবে যতটুকু সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে।’

এদিকে ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারি পরিচালক মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ‘সম্প্রতি সময়ে বহুতল ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতা পৌরসভা থেকে জেলা প্রশাসনের হাতে যাওয়ার পর বিল্ডিং কোড আইন বা ফায়ার সার্ভিস আইন মেনে নকশার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, এই জেলা শহরের দুই শতাধিক ভবন রয়েছে যার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশরই বৈধ অনুমোদন নেই। আমাদের ফায়ার স্টেশনের ছয় তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর বেশি উঁচু ভবনের কোনো বিপদ ঘটলে কি হবে বলা যাচ্ছে না।

এদিকে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া ফরিদপুরের বহুতল ভবন মালিকেরা বিল্ডিং কোড ও ফায়ার সাভির্সের অনুমোদন না নিয়ে ভবন করছে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে বহুতল ভবন করতে হলে অবশ্যই সরকারি নিয়মের মধ্যে করতে হবে, এর ব্যতিক্রম কেউ করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই অবৈধ ভবনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এরপরে ওই ভবন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সকলকেই ফায়ার সার্ভিস আইন মেনে চলতে হবে। তথ্যসূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ