ফেনীতে নতুন জাতের ব্রি ধান-৮৬ এর বীজ উৎপাদন

জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে নতুন জাতের ব্রি ধান-৮৬ এর বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। আজ সদর উপজেলার রুহিতিয়া গ্রামের ব্রি ধান-৮৬ প্রদর্শনীর আওতায় জমির ফসল কর্তন করা হয়।
এসময় ফেনী জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তারসহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে কাজীরবাগ ইউনিয়নের রুহিতিয়া গ্রামে ৫ একর জমিতে ব্রি ধান-৮৬ বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। নতুন প্রজাতির এ ধান বীজ নোয়াখালী থেকে এনে পরীক্ষামূলক সদর উপজেলার গোবিন্দপুর, ছনুয়া ও মালিপুর এলাকায় ১৫ জন করে কৃষকের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়েছে। ফসল উত্তোলনের পর কৃষি কর্মকর্তা বীজের গুণগত মান পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষিত বীজ বিক্রির জন্য কৃষকের মধ্যে কৃষি অফিসের নিজস্ব প্যাকেটও সরবরাহ করা হবে।
নতুন জাতের এই ধান বীজ সম্পর্কে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বাসসকে বলেন, এই এলাকার ১৫ জন কৃষক-কৃষাণীকে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ ও সকল প্রকার সহায়তা দিয়ে এই বীজ ফলনে উদ্বুদ্ধ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তিনি বলেন, এ ধান হতে উৎপাদিত বীজ বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবেন। আজকে ফসল কর্তনের পরে বীজ প্রক্রিয়া ও প্যাকেটজাত করণেও তাদের সহায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে তারা যাতে বীজ বিক্রি করতে পারে সেজন্য তাদের লাইসেন্সও করে দেয়া হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
বীজের গুনাগুন সর্ম্পকে জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্রি ধান-৮৬ সম্পূর্ণ নতুন একটি ধানের জাত। এ জাতের ধানের বীজ থেকে অধিক ফসল পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে আমরা ব্রি ধান ৬৭, ৬৮ পর্যন্ত মাঠে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। নতুন জাতের এই বীজ থেকে অধিক ফলন পাওয়া যাবে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে দলগতভাবে কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সকল ধরণের সহযোগিতা করার মাধ্যমে আমরা এই বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এখান থেকে বীজ সংরক্ষণ করবো এবং প্রতিবেশী কৃষকরা এই বীজ সংগ্রহ করে লাভবান হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ ধান চাষকারী কৃষক মো. সোহেল বলেন, গতবছর ডিসেম্বর মাসে ফেনী সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে ৫০ কেজি ব্রি ধান-৮৬ দেওয়া হয়। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় আমার ৩ একর জমিতে বীজ রোপন করি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমাদের সার ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, ফসল উত্তোলন ও সংরক্ষণ করার পর, বীজ বিক্রি করে আমার লাভবান হবো।
আরেক কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ফেনী জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর ও সদর উপজেলা কৃষি অফিস নিয়মিত আমাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন। আমাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে ফসল উৎপাদনের অনেক অজানা বিষয়ে অবগত করেছেন। বীজ বিক্রি করার জন্য আমাদের লাইসেন্সও করে দিচ্ছেন। এইগুলো খুবই ভালো মানের বীজ। আমাদের দেখে অন্যান্য কৃষকরাও এই বীজ ফলনে উৎসাহিত হবেন।
মালিবাগ ব্লগের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নুরুল আলম ভূঁঞা বলেন, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের বীজ রোপন, বীজতলা তৈরি, সার প্রয়োগ, ফসল কর্তন ও সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা ফসল উৎপাদনের ধাপ সমুহ সঠিকভাবে পালন করায় ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষি প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন খাঁন জানান, কৃষকরা ফসল উৎপাদন করার পর শ্রমিক দিয়ে ফসল কেটে ঘরে তুলতে যে অর্থ খরচ হয়। খরচের হিসাব বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তির ধান কাটার মেশিন ব্যবহার করলে খরচ তুলনামূলক কম হয়। তাই আজকে কৃষকরা মেশিনের সাহায্যে ধান কেটে খরচ সাশ্রয় করতে পারছেন।