ফেনীর প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা

করোনাভাইরাস আতঙ্কে ফেনীর বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। ক্লিনিক মালিকরা বলছেন, নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে চিকিৎসকরা বসছেন না। এদিকে, সরকারি হাসপাতালে জ্বর, ঠাণ্ডা ও কাশির কোনো চিকিৎসা দিচ্ছে না জরুরি বিভাগ। এতে রোগীরা যেমন বিপাকে পড়ছেন, তেমনি আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। জেলার আলকেমী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা দেন ডা. আবদুল হালিম। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি আসছেন না। এতে কয়েক দিনে প্রায় শতাধিক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছেন। উপশম জেনারেল হাসপাতালে আগে প্রায় ৭-৮ জন চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখতেন। কিন্তু সেখানে এখন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতে সেখানে সোনাগাজী থেকে আসা এক রোগীর মা বলেন, ‘আমি সেই ৩টার সময় এসেছি। এখন সিরিয়াল লেখায় নিয়োজিত একজন বলছেন যে চিকিৎসক আসবেন না, তিনি ছুটি নিয়েছেন।’

রুবেল নামে এক শিশু রোগীর বাবা বলেন, ‘তিন দিন আগে ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার জাহাঙ্গীরের কাছে এসেছিলাম এবং ছেলের রক্তে সমস্যা পেয়েছিল। তাই আবার তিন দিন পর আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আজ এসে তাকে পাচ্ছি না।’ বুধবার আলকেমী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সোনাগাজী থেকে আসা একজন প্রসূতি রোগী ডা. তাসলিমা আক্তারের কাছে এলেও তিনি না থাকায় বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ন্যূনতম নিরাপত্তা না থাকার পরও কোনো কোনো চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগী দেখছেন। আর যারা রোগী দেখছেন না তারা নিরাপত্তার অভাবেই তা করছেন। সোনাগাজীর ডক্টরস ম্যানশনের ডা. গোলাম মাওলা জানান, তিনি নিয়মিত চেম্বারে বসছেন। তবে সাবধানতা ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছেন। এ ব্যাপারে উপশম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. কে পি সাহা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আতঙ্কে চিকিৎসকরা চেম্বারে বসছেন না। আমরা মানবসেবায় জড়িত কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে আমরা সেটা করতে পারছি না। তবে জরুরি ব্যবস্থা চালু রেখেছি।’

আলকেমী হাসপাতালের ম্যানেজার হাবীব মিয়াজী বলেন, ‘চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ক্লিনিকে আসছেন না। তারা স্বেচ্ছায় না এলে জোর করার তো কোনো বিধান নাই। তাই বিনা চিকিৎসায় প্রতিদিন রোগীরা ফেরত যাচ্ছেন।’ ফেনী জেলা ডায়াগনেস্টিক সেন্টার সমিতির সভাপতি হারুন উর রশিদ বলেন, ‘চিকিৎসকরা বিএমএ ও সিভিল সার্জন নিয়ন্ত্রিত। আমরা ইতোমধ্যে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলেছি। তিনি এ ব্যাপরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবেন, যাতে সব রোগী নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পায়।’ জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্ত রোগী ছাড়া বাকিদের সেবা দিতে পারবেন। প্রয়োজনে ফোনে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। আর প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের সাথে আলোচনা করে সেখানে চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি চিকিৎসক যারা আছেন, তারা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন না। সেখানকার মালিকদের সাথে কথা বলে রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেবেন।’ সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/ আখনূর রহমান