বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জনগণ ‘সকল সম্ভাবনা’ হারিয়ে ফেলে : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্যে আবারো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে দায়ী করে বলেছেন, নৃশংস এই হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের জনগণ সব সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলেছিল।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা উপহার দেন। কিন্তু যারা এই স্বাধীনতা চায়নি ও এতে বিশ্বাসও করে না এবং যারা দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে স্বাধীনতার জন্যে কোন সহায়তাই করেনি তারাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতির পিতার জেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময়ে বিদেশে থাকায় তিনি ও তার ছোট বোন ১৫ই আগস্টের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এই হত্যাকান্ডের পর দেশের জনগণের সকল সম্ভাবনা হারিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে এমন এক সময়ে হত্যা করা হয় যখন স্বাধীনতার পর তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল।
রোববার নগরীতে আওয়ামী লীগের কৃষক সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত এক স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন ও বক্তব্য প্রদান করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত স্মরণে ৪৫ তম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠসমূহের মাসব্যপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক লীগ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে এই স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুধা ও দারিদ্র্রমুক্ত সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কাজ করতে বিকেএলের নেতা কর্মীদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, বাঙালির কল্যাণ নিশ্চিত করতে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা গঠন করতে বঙ্গবন্ধু তার জীবন উৎসর্গ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তবেই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
তার সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সরকারের লক্ষ্য জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে তাদের একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়া।
তিনি বলেন, জনগণ যাতে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বসবাসের জায়গা পায় সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশ এক অন্ধকার যুগে আচ্ছন্ন ছিল।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৯ সালে জনগণের বিশাল রায়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসি। এরপর থেকে কৃষক-শ্রমিকসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারির সময়ে সরকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সরকার ও দলের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গরিব, এতিম ও অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ার এবং তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে ব্রতী হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘এ জন্য জাতির পিতা সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে পারবেন।’
দুঃসময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনার এই সময়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও ভালো কাজ করছে।’
তিনি শোকের মাসে তাঁর পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং বলেন, ‘এই মাসে আমি আমার সবাইকে হারিয়েছি, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
এ সময় তিনি বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি ও উদাত্ত আহ্বান জানান।
ভিডিও কলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
আরো বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, এমপি।