বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ

রথমবার জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের মূল অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় ক্ষুব্ধ হন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা। যদিও পরে মঞ্চের এক পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত একটি বোর্ড জুড়ে দেওয়া হয়।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ : গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যদিও অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘জার্নি’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে।

শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকাই নয়, অনুষ্ঠানে উপস্থাপকদের অতিথিদের নাম ভুল উচ্চারণ, অশোভনভাবে এখানে-ওখানে সামিয়ানা ছিড়ে ঝুলে থাকা, অপরিচ্ছন্ন চেয়ারসহ নানা ত্রুটি বিচ্যুতিতে ভরা ছিল অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে লোকজনের সংখ্যাও ছিল খুবই কম, বেশিরভাগ চেয়ারই খাঁলি পড়ে ছিল।

তবে ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘর চত্বরের উত্তর দিকটায় গণহত্যা দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়। মঞ্চের সামনে থেকে সিঁড়ি নেমে গিয়ে যে চত্বর সেখানে দর্শকদের বসার জন্য চেয়ার পাতা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির জন্য বেলা সোয়া ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

মঞ্চের সামনে পূর্বদিকে বসেন মুক্তিযোদ্ধারা। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের ব্যানার কিংবা অনুষ্ঠান স্থলে বঙ্গবন্ধুর কোন ছবি না থাকায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। এরপর আরও একজন মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়িয়ে মঞ্চে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য কিছু একটা বলতে থাকেন। তখন সংগীত পরিবেশনের পর অতিথিরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করছিলেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা বসে পড়েন। তবে কিছুক্ষণ পর তারা আবার একসঙ্গে দাঁড়িয়ে হইচই করতে থাকেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘২৫ মার্চের অনুষ্ঠান আর কোথাও বঙ্গবন্ধুর ছবি নেই। এটা কীভাবে হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে সবার আগে। বঙ্গবন্ধুর ছবি না রাখায় আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ওই সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী তার আসন থেকে উঠে গিয়ে ডায়াসের কাছে গিয়ে মাইকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দাবিটি যথার্থ। ওরা (আয়োজক) বলেছে ব্যবস্থা করেছিল, আপনারা জানেন যে ঝড়ের…কারণ আমরা এভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। আরও অনেক ছবি ছিল নিয়ে আসতেছে, বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ইনশাআল্লাহ আসবে। এ অপরাধটুকু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য বিনীতভাবে আমার ভাইদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

পরে অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত একটি বোর্ড মঞ্চের পূর্ব পাশে জুড়ে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন শারমীন সুলতানা ও জুলহাস জুবায়ের নামের দু’জন। জুবায়ের পুরো অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলামের নাম উচ্চারণ করেছেন এবি তাজুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে না থাকলেও উপস্থাপক শারমীন উপস্থিত হিসেবে তার নাম বলেন। উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বেলা ১২টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন।

বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানানোর পর একজন অতিথি ডায়াসের দিকে যেতে থাকলে উপস্থাপক জুলহাস জুবায়ের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার জন্য অতিথিকে ধন্যবাদও জানিয়ে দেন। সকালে ঝড়ের কারণে অনুষ্ঠানস্থলের সামিয়ানা খুলে এখানে-ওখানে ঝুলে পড়ে। এগুলোর জন্য কোন কোন স্থান থেকে মঞ্চও দেখা যাচ্ছিল না। সামনের অনেক চেয়ারে ধুলোবালি ও কাদা লেগে থাকতে দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দর্শকের সংখ্যা বেশি থাকলেও আলোচনা অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানস্থল অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জন্য এ অনুষ্ঠান তারাই নেই। অনেকেই চলে গেছে। এই আলোচনা তারা শুনলেই উপকার হত।’

সবার শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রথমেই ক্ষমা চাচ্ছি আমাদের আজকের এ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দৈন্যতার জন্য, বিভিন্ন ভুল-ত্রুটির জন্য। আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, খুব তড়িঘড়ি করে দুই দিনের মধ্যে আমরা এটা করতে গিয়েছি, এছাড়া সকাল বেলা প্রকৃতি একটু বিরূপও ছিল।’