বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে : ড. রাজ্জাক

কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে বন্যা পরিস্থিতির আর অবনতি না হলে কৃষি মন্ত্রণালয় যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তাতে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যাবে এবং আমনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী আজ সোমবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও তা উত্তরণে করণীয় বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ১ম পর্যায়ে ২৫ জুন হতে ৯ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় মোট ১৪টি জেলায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, বন্যায় আউশ, আমন, সবজি, পাটসহ বেশ কিছু ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি কমিয়ে আনতে অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিকল্প বীজতলা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে বিকল্প ফসলের চাষের ব্যবস্থা, নিয়মিতভাবে আবহাওয়া মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে যাতে করে বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়।
চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমনের বীজতলার জন্য দ্রুত বিকল্প বীজতলা তৈরির নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এসময়ে কর্মকর্তাদের অত্যন্ত তৎপর ও সক্রিয় থাকতে হবে। বন্যার কারণে এ সময়ের কৃষি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত বীজ মজুদ রয়েছে। এসব বীজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে দ্রুত নতুন বীজতলা তৈরি করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- অধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলাসমূহে কৃষকের জমিতে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকার কমিউনিটি ভিত্তিক রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ, প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন, ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য ট্রেতে নাবী জাতের আমন ধানের চারা উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসুচি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমন চাষ সম্ভব না হলে, ৫০ হাজার কৃষকের মাঝে প্রায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার মাষ কলাই বীজ ও সার দেয়া হবে।
সভায় জানানো হয়, ১ম পর্যায়ে ২৫ জুন হতে ৯ জুলাই পর্যন্ত অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও নদ নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যায় রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল জেলাসহ মোট ১৪টি জেলায় ১১টি ফসলের প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪৯ কোটি টাকা। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার জন।
আর ২য় পর্যায় ১১ জুলাই হতে ১৯ জুলাই পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, বগুড়া, টাংগাইল, নাটোর, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, শেরপুর বি-বাড়িয়াসহ মোট ২৬টি (আগের ১৪টিসহ) জেলায় ১৩টি ফসলের প্রায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ এখনও নিরূপণ হয় নি।
অনলাইন সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) ড. মো. আবদুর রৌফ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, বিএডিসি’র চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল ও জেলাসমূহের কৃষি কর্মকর্তগণ এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।