বরগুনায় করোনা মোকাবেলায় সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম

জেলায় মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫০টি পরিবারের মধ্যে ১ হাজার ১২৮ টন খাদ্যসামগ্রী এবং নগদ ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫০ টাকা বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বাসসকে জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত ২৮ মার্চ থেকে নিয়মিত তালিকার বাইরেও কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের তালিকা করে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রাপ্যতার ভিত্তিতে পরিবার প্রতি প্রথমধাপে ১০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, এক কেজি ডাল, আধা লিটার সয়াবিন তেল, মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। নিয়মিত তালিকার বাইরেও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল ফোনে বা কন্ট্রোল রুমে ফোনকলের মাধ্যমে খবর পেয়ে প্রায় ১ হাজার পরিবারে রাতের বেলা সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, ওএমএস এর মাধ্যমে ১৫ হাজার ৬০০ পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা দরে ১১০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া, শিশু খাদ্য হিসেবে বরগুনার ৪ হাজার ১০০ পরিবারের মধ্যে নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখনও জেলায় ৩৩২ টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনসহ পুলিশ, নৌবাহিনী, র‌্যাব, এনজিও, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, ব্যক্তি পর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরী, বিদেশ ফেরৎদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ, শ্রেণিভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম প্রায় শতভাগ স্বচ্ছতায় চলমান রয়েছে। মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য গোপনীয়ভাবে ও দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো জেলা প্রশাসনের ‘মোবাইলফোন-সার্ভিসটি’ অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে। জেলার হাজার-হাজার অসহায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

জেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য মতে, বরগুনা জেলায় অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা হচ্ছে ৯৩ হাজার ৭৪২ জন এবং সাধারণ দরিদ্র হচ্ছে এক লাখ ৮৩ হাজার ২০ জন। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা কিছু বেশি। জেলা প্রশাসক জানান, যতদিন প্রয়োজন পড়বে ততদিনই এরকম সহায়তা অব্যহত থাকবে। চলমান প্রক্রিয়ায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে- জেলার ভাসমান বেদে সম্প্রদায়, বাউল, হিজরা, ভিক্ষুক, মুচি, কামার, নর-সুন্দর, মেকানিক, দর্জি থেকে শুরু করে পরিবহন শ্রমিক, নৌযান শ্রমিক, ট্রাক শ্রমিক, ইজিবাইক শ্রমিক, মোটরসাইকেল শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, ডেকরেটর শ্রমিক, ওয়ার্কশপ শ্রমিক সবাই আছে তালিকায়। তালিকায় আরও আছে শিল্পী, খেলোয়াড়, রাখাইন স¤প্রদায়, প্রতিবন্ধী, ভাসমান দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মনোহরী দোকানদার এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবাওে মধ্যে। সূত্র জানায়, করোনায় আক্রান্ত রোগী ও তাদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের পাশেও রয়েছে প্রশাসন। আক্রান্ত পরিবারকে ইফতার সামগ্রীসহ পুরো এক মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, বরগুনা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ সবার ইফতার সামগ্রীসহ পুরো এক মাসের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সরকারের বাইরেও ব্যক্তি ও এনজিও পর্যায়ে হাইজিন কিটসসহ নানা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ইমারজেন্সি রেসপন্ডস ও ফুডস সেফটিনেট এর আওতায় বিভিন্ন এনজিও সারা জেলায় নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। নৌ বাহিনী পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে। র‌্যাব সদস্যরা ঘুরে-ঘুরে খাদ্যসহায়তা, হাইজিন কিটস বিতরণ করছে বলে র‌্যাব ৮ কোম্পানি কমন্ডার রইস উদ্দিন বাসস’কে জানিয়েছেন।

বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মানবিক সহায়তায় বরগুনার মানুষ একে অপরের পাশে রয়েছে। বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জানিয়েছেন, খাদ্যাভাবে যেন কোন মানুষ কষ্ট না পায় সেদিকে সম্পুর্ণ সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বরগুনা ২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ শওকত হাসানুর রহমান রিমন করোনায় মৃতের জানাজায় ইমামতিসহ দাফন কার্যেও অংশ নিয়েছেন, যা মানবিকতার অনন্য নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন এনজিও ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মী অ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না। সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান জানান, বরগুনায় ৯ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৩৬ জন লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এরা জেলার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ১৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং বাকিরা নিজ-নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন। এ যাবত বরগুনা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্ত কোন মৃত্যু নেই। জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, বরগুনাবাসী যাতে স্বাস্থ্যবিধি, লকডাউন সঠিকভাবে মেনে চলে সেজন্য জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, র‌্যাব ও নৌবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান