বাংলাদেশের সাথে ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্ব বজায় রাখার অঙ্গীকার জার্মানির

বাংলাদেশে জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোলৎজ সোমবার বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সাথে ভবিষ্যতৎ অংশীদারিত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো গভীর করবে। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বের অঙ্গীকার বহাল থাকবে।’ রাজধানীর শের-এ-বাংলা নগর এলাকার এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ-গার্মেন্টস কনসাল্টেশনস ২০২০ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। আলোচনা সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনোমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড)-এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান ড. উতে হিনবাখ। পাশাপাশি, অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং ইআরডি’র ইউং চিফ (ইউরোপ) ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহান্ত।

রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপারে পিটার ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি জার্মানির ইকোনোমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী ড. গার্ড মুলারের সাম্প্রতিক সফরকে তুলে ধরে বলেন, মুলার স্পষ্টই বলেছেন যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জার্মান বাংলাদেশ সরকার ও এর জনগণের পাশে দাঁড়াবে। পিটার বলেন, এই সংকট মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে বলে বাংলাদেশের দাবির সাথে জার্মান একাত্মতা পোষণ করছে। রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে, টেকসই পরিবেশে সম্মানের সাথে ফিরে যেতে পারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সে অবস্থা তৈরি করতে হবে। পিটার আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা জরুরি।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এই উৎসবে আপনাদের অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত এবং আমরা উন্নয়নের উচ্চমাত্রায় পৌঁছানোর লক্ষে একসাথে কাজ করছি।’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ধীরে ধীরে এলডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই লক্ষে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। আরএমজি খাতকে অর্থনীতির মেরুদ- ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি উল্লেখ করে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জিএসপি বাণিজ্য প্রশ্নে চলমান সংলাপে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে পিটার বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্রতার হার হ্রাস পেয়ে ২০% এবং অতিদারিদ্রতার হার এক ডিজিটে নেমে এসেছে। তিনি আরো বলেন, প্রায় সবার কাছে শিক্ষা, জ্বালান ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৮তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ এবং শিগগিরই দেশটি আরো এগিয়ে যাবে। ইআরডি এডিশনাল সেক্রেটারি ও উইং চিফ (ইউরোপ) ড. গৌরাঙ্গ বলেন, জার্মান বাংলাদেশকে কারিগরি ও আথির্ক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং বর্তমানে জার্মানীর সহায়তায় ১৭টির মতো প্রকল্প চলছে। বাংলাদেশ-জার্মান কনসালটেশনস নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থা সংস্কার ও মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় নগর এলাকাগুলোতে প্রস্তুতি গ্রহণ, জীববৈচিত্র, গার্মেন্টস খাতের কর্মীদের সামাজিক মান ও কাজের পরিবেশ উন্নয়ন, কক্সবাজারে ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা’র মতো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেজা, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এই বৈঠকে যোগ দেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান