বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন-২০১৯-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং সমুদ্র অঞ্চলে বিভিন্ন অপরাধ বিশেষ করে জলদস্যুতা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন-২০১৯’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন প্রদান করা হয়। পরে বিকেলে সচিবালয়ে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দোকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘আনক্লোজ-১৯৮২’, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত দুটি মামলা রায় (মিয়ানমান ও ভারত) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিধিবিধান অন্তর্ভূক্ত করে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর একটি প্রাথমিক খসড়াটি প্রস্তুত করে।

যার মধ্যে-সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌচলাচলের নিরাপত্তা বিরোধী অবৈধ কর্মকান্ড দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত, দূষণজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতি প্রভৃতি রয়েছে বলেও তিনি জানান।

মন্ত্রি পরিষদ সচিব বলেন, ‘সুনীল অর্থনীতি এবং সমুদ্র সম্পদের টেকসই অনুসন্ধান ও আহরণ হতে সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সঠিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণ।’

তিনি বলেন, আইনটি প্রণীত হলে তা ব্যাপকভিত্তিক ‘মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণ’সহ ‘অভ্যন্তরীণ জলসীমা’ ও ‘রাষ্ট্রীয় জলসীমা’ ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ‘একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া দলদস্যুতা, সমুদ্র সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ ও নৌ চলাচল নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বেআইনি কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

পাশাপাশি সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সহযোগিতা থেকে সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়, বলেন তিনি।

খসড়া আইনানুযায়ী দস্যুতার ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান সম্পর্কে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদন্ড হবে। নরমাল কোন ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাস করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর যেগুলো দস্যুতা করে নেবে তা জব্ধ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘কোন ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের চেষ্টা বা সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর যদি (জলদস্যুতায়) সহযোগী হয় সহায়তা দেয় সেক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থ দন্ডে দন্ডিত হবেন।’

সচিব বলেন, ‘ভিন্ন দেশের লোকও যদি আমাদের জলসীমায় এসে এসব অপরাধ করে তিনিও একই শাস্তি পাবেন।’ বাংলাদেশের জলসীমা দিয়ে চলাচলের সময় বিদেশি জাহাজে কোন অপরাধ সংঘঠিত হলে অপরাধী গ্রেফতার ও তদন্ত এই আইনানুযায়ী পরিচালিত হবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রি পরিষদ সচিব বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরনের নিমিত্তে ‘দি টেরিটোরিয়্যাল ওয়াটার্স এন্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। পরবর্তী সময়ে ‘১৯৮২ সালে ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন অন দি ল অব দি সী’ (আনক্লস-১৯৮২) শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উক্ত কনভেনশন স্বাক্ষর করে।

এদিন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মন্ট্রিল প্রটোকল’ এর কিগালি সংশোধনী অনুস্বাক্ষরের প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়। কিগালি সংশোধনী ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে কার্যকর হয়েছে। ২২ আগষ্ট ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্বের ৮১টি দেশ সংশোধনীটি অনুস্বাক্ষর করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ অনুস্বাক্ষর করেছে। অন্যান্য দেশসমূহ অনুস্বাক্ষর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

খন্দোকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনী বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু বান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে। ফলে, উল্লেখযোগ্য পরিমান গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পাবে যা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।’

এদিন, ২০১৯ সালের হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফর সম্পর্কেও মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ করা হয় বলেও মন্ত্রি পরিষদ সচিব উল্লেখ করেন। তথ্য:বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান