বাগদা চিংড়ির নতুন সম্ভাবনা

সারা পৃথিবীতে চিংড়ি মাছের যে চাহিদা ছিল, এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে পৃথিবীর বহুদেশে ভেনামি নামে একটা চিংড়ির জাত চাষ করা হচ্ছে। এর সুবিধা হচ্ছে এই জাতের চিংড়ির ইল্ড বেশি হওয়ায় অনেক কম দামে তারা বিক্রি করতে পারে। এর সাথে আমাদের দেশের যে চিংড়িটা হয় সেটা হল বাগদা চিংড়ি। এ চিংড়িটা দেখতে অনেক সুন্দর এবং এর স্বাদ অনেক ভাল, অনেক ভাল মিষ্টি। এ চিংড়িটার একটা মার্কেট ছিল। এখন যেহেতু সস্তায় চিংড়ি পাচ্ছে অনেকে, তাই আর এই চিংড়িটা কেউ নিচ্ছে না। ফলে এই চিংড়িটা অনেক পিছনে পড়ে যাচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার হল, এই চিংড়িটার দাম যথেষ্ট বেশি। কারণ প্রতি হেক্টরে এর উৎপাদন খুব একটা বেশি হয় না। কিন্তু ভেনামির উৎপাদন এর থেকে দশ-বারো গুন বেশি। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে আমাদের বাগদা চিংড়ি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কম্পিটিশন করা যাচ্ছে না। তার মানে এটা নিয়ে আমাদের কোন সম্ভবনা নেই বিষয়টা তা না। এটার অনেক বড় সম্ভবনা রয়েছে। কারণ, সারাবিশ্বে চিংড়ির চাহিদা আছে এবং দিন দিন তা বাড়ছে।

তবে মাঝখানে ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে খাবারে মানের ক্ষেত্রে তাদের অনেক কমপ্রমাইস করতে হয়েছে। যার কারণে তাদের অনেকে সস্তা চিংড়ি খেয়েছে, আর অনেকে হয়তো চিংড়ি মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু যদি পরিমাণের দিক থেকে হিসাব করি, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও কিন্তু চিংড়ির চাহিদার পরিমান কমে নাই। তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে কাজ করবো? আমরা তো বাগদা চিংড়িতে স্পেশাল।

এখন আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, বাগদা চিংড়ির একটা ভাল গ্লোবাল মার্কেট আছে। এটা ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশসহ অল্প কয়েকটা দেশে হয়। বাংলাদেশে এই চিংড়িটা অনেক ভাল জন্মে এবং বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে এটা অনেক সুইটেবল। আমরা অনেক সুন্দরভাবে এটাকে চাষ করতে পারি। ইল্ড বেশি না হলেও কিন্তু কোয়ালিটির দিক থেকে বাগদা চিংড়ির ক্ষেত্রটা বাংলাদেশে ব্যাপক এবং এখানে এটা করা সম্ভব।

এসিআই কেন চিংড়ির বাজারে: আমরা চিংড়ির বাজার পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই যে, একটা হল কমিউনিটি চিংড়ি, যেটা ভেনামি জাতীয় চিংড়ি। আরেকটা হচ্ছে বাগদা চিংড়ি। বাগদা চিংড়ির একটা আলাদা মার্কেট সেগমেন্ট রয়েছে। আর এই সেগমেন্টটা যথেষ্ট ভাল, প্রিমিয়ার রেটে বিক্রি হয়। পৃথিবীর অনেক ভাল ভাল রেস্ট্রুরেন্ট আছে, যারা বাগদা চিংড়ি ছাড়া অন্য কোন চিংড়ি রান্না করে না। ফলে তারা কাস্টমারকে রিটেইন করতে পারে। অর্থাৎ অনেকে আছে যারা মনে করে, স্পেশাল একটা ইভেন্ট আছে, বাহিরে কোন রেস্টুরেন্টে খাবে। তখন তারা ওই রেস্টুরেন্টে যাবে। কারণ হল, ওই রেস্টুরেন্টে যে চিংড়ি দেয় তার স্বাদ খুব ভাল। অনেকে কনফিউসড হয়ে মনে করে যে, রান্নাটাই বিশেষ ভাল। কিন্তু বিষয়টা তা না, বাগদা চিংড়ির স্বাদ এটুক আলাদাই হয়।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে যেভাবে চিংড়ি চাষ করা হয় সেটা অন্যান্য দেশের চিংড়ি চাষের মত নয়। কারণ এখানে ফিড খাওয়ানো হয় না, এখানে নরমাল ন্যচারাল প্রসেসে চাষ করা হয়। যার কারণে অনেক কোম্পানি তাদের কৃষকের ট্রেনিং দিয়ে এটাকে অর্গানিক চিংড়ি হিসাবে প্যাকেটজাত করে বিদেশে মার্কেটিং করছে। ফলে অর্গানিক মার্কেটটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে, বিশেষ করে আমরিকা ও ইউরোপের মত দেশগুলোতে। তাই আমরা মনে করি যে, আমাদের দেশে বাগদা চিংড়ির ক্ষেত্রটা কিন্তু একটু আলাদা, মার্কেট পজিশনটা একটু আলাদা এবং টার্গেট মার্কেটটাও একটু আলাদা। সুতরাং এগুলো আলাদাভাবে দেখতে হবে এবং প্রমোট করতে হবে।

আমরা মনে করি যে, এসিআই’র মত একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে আমরা কৃষিতে অনেক বড় কোম্পানি হওয়ায় দেশে-বিদেশে আমাদের যথেষ্ট সুনাম আছে। আমাদের উপর ক্রেতাদের যেহেতু বিশ্বাস আছে, সেহেতু আমরা যদি এই বাগদা চিংড়ির সেক্টরে একটু ফোকস করি এবং এই টার্গেট মার্কেটের উপর একটু এড্রেস করি, তাহলে আমরা ভাল করতে পারব। একটা বিষয় হল বাগদা চিংড়ির অনেক সুনাম রয়েছে, ভাল চাহিদা আছে এবং বাগদা চিংড়িকে বিক্রি করতে পারলে ভাল ক্ষেত্র ও ভাল দরও আছে। একইসঙ্গে যে বিক্রি করবে তার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আমরা মনে করি যে, দেশে-বিদেশে এসিআই’র প্রতি অনেক বিশ্বাস রয়েছে এবং আমরা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভাল করতে পারব।

কিভাবে লাভজনক করা যাবে: চিংড়ি চাষে লাভজনক অবস্থায় যেতে হলে আর্ন্তজাতিক মার্কেটে ভাল দর পেতে হবে। আর ভাল দর পাওয়ার জন্য আমাদেরকে একেবারেই সুনির্দিষ্ট মার্কেট সেগমেন্ট নির্বাচন করতে হবে, যেখানে চিংড়ি মাছের ভাল দর পাওয়া যাবে। কারণ ভাল রেস্তোরায় খাবারের দাম অনেক বেশি এবং তারা অনেক ভাল কোয়ালিটির চিংড়ি কালেক্ট করে। এছাড়া অনেক জায়গা আছে যেখানে অর্গানিক চিংড়ির অনেক ভাল চাহিদা আছে। সেক্ষেত্রে যদি ভাল ইন্টারেস্ট ও প্রাইজ থাকে তবে আমাদের দেশের কৃষকরা অনেক ভাল প্রাইজ পাবে। একইসঙ্গে আমাদের দেশের চিংড়ি কিন্তু ট্রাডিশনালী চাষ করা হয়। আমাদের দেশে কৃষকদের যদি প্রশিক্ষণ করিয়ে সুন্দরভাবে তার পুকুর বা ঘেরটাকে ব্যবস্থাপনা করা হয়, পানি ব্যবস্থাপনা করা হয়, পানির টেম্পার যদি ঠিক থাকে এবং তাদেরকে যদি ভাল চিংড়ির পোনা দেওয়া যায় তাহলে উৎপাদন বাড়বে। আর যতটুকু উৎপাদন বাড়বে তাতেই কৃষকরা লাভবান হবে।

নতুন মার্কেট তৈরি করা: আমাদের দেশে বাগদা চিংড়ি চাষের সমস্যা হচ্ছে, এই চিংড়ির বাচ্চা হয় কক্সবাজারে। আর সে বাচ্চা প্লেনে করে আসে যশোরে। পরে ট্রাকে করে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে কালিগঞ্জ ও সাতক্ষীরার মত জায়গাতে যায়। সেই চিংড়ি আবার বরফের মধ্যে দিয়ে প্যাকেট করে নিয়ে আসা হয় খুলনা, যশোর অথবা চট্টগ্রামে। এত দীর্ঘ রাস্তাঘাট পেরিয়ে যদি আসে সেখানে কিন্তু ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত হবে। ফুড অথবা এই ধরণের চিংড়ি মাছ এরকমভাবে পড়ে থাকলে তো ব্যায়কটিরিয়া হবেই। আর ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত হলে কোয়ালিটি কমপ্রোমাইজ করতে হবে।

তাহলে এই প্রডাক্টটা কিন্তু আর কেউ নিবে না। এক্ষেত্রে আমরা এসিআই, সুন্দরবনের কাছাকাছি কালিগঞ্জ উপজেলায় আমিয়ান নামের একটি গ্রামে, যেখানে পাকা ঘর-বাড়ি নাই, সেখানে চিংড়ি মাছের কারখানা করলাম। কারণ ওখানের আশেপাশে চিংড়ি মাছের চাষ হয় এবং চাষিরা যেন চিংড়িটা তুলেই বরফে মধ্যে দিতে পারে। যখন চাষিরা চিংড়িটা তুলেই বরফের মধ্যে দিবে, তখন সেটা মারা যাবে। আর ওই বরফের ট্রাকটা আমাদের ফ্যাক্টরিতে দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে। ফলে সুবিধা হল এই যে, চিংড়ির ভিতরে অনেকে যে কাটা দেয়, লোহা দেয়, গুটেং দেয়, আর তার ফলে চিংড়িগুলো পচে যায় কিংবা গন্ধ করে, এই সমস্যাটা আর থাকবে না। তাহলে লাভ হচ্ছে এই যে, আমরা বাগদা চিংড়ি দিচ্ছি, যার একটা চাহিদা সারা পৃথিবীতে আছে। এটার একটা বিশেষ মার্কেট আছে। অনেক বড় না হলেও এটার একটা স্পেশাল মার্কেট প্রাইজ আছে।

এসিআই বাংলাদেশের এগ্রিকালচারে সব থেকে বড় কোম্পানি। আমরা আমিয়ান গ্রামে যে ফ্যাক্টরিটা করেছি, সেটার কোয়ালিটি একটা ওষুধের কারখানার মত। বাতাসের কোয়ালিটি, পানির কোয়ালিটি, অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট, ফ্লোর, দেয়াল, ওয়ার্কার, ওয়ার্কার হাইজেন্স সেফ্টি সবকিছু কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। ফলে দেখা যাবে যে, আমাদের দেশের চিংড়ির ইমেজ হল বাগদা চিংড়ি। প্রোসেস করছে এসিআই, আর প্রোসেসিংয়ের পরে এটা যাবে ভাল কোনো কোম্পানিতে, যারা এই সমস্ত চিংড়ি ডিল করতে পারবে। লাভ হবে এই যে, চিংড়ির ভাল একটা প্রাইজ পাওয়া যাবে এবং পর্যায়ক্রমে চিংড়ি শিল্পের প্রবৃদ্ধি হতে থাকবে।

এখন কৃষকের কথা বলি, যারা চিংড়ি উৎপাদন করবে, তাদেরকে আমরা ট্রেইনিং দিব। আপনি জেনে থাকবেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দুই তিন ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তার পুকুর আগে ছিল হয়তো এক থেকে দেড়-দুই ফিট গর্ত, এইটুকু গভীরতার ভিতর যদি চিংড়ি চাষ করে, তাহলে দিনে পানির টেম্পার বেড়ে যাবে, রাতের বেলায় কমে যাবে।

ডে-নাইটে যদি টেম্পারেচার ডিফারেন্স হয়, তবে চিংড়ি চাষ ভাল হবে না, কোয়ালিটি ভাল হবে না, কালার ভাল হবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দেব, তার পন্ডটা কিভাবে ম্যানেজ করা যায়, কিভাবে চিংড়ি মাছ হারভেস্ট করবে, ভাল পোনা কোথায় পাওয়া যাবে ইত্যাদি। ইতিমধ্যে আমরা কক্সবাজারে যেখানে চিংড়ির চাষ হয়, সেখানে চিংড়ি মাছের পোনার খাবার সরবরাহ করছি। আমেরিকা থেকে উন্নত মানের খাবার এনে তা সরবাহ করছি। আবার চিংড়ি মাছের বাচ্চা কেনার আগে কক্সবাজারে আমরা যে ল্যাবরেটরি করেছি, সেখান থেকে বাচ্চার ভাইরাস আছে কিনা তা টেস্ট করে দিচ্ছি। সুতরাং ভাইরাস না থাকায় চিংড়ির ভাল উৎপাদন হবে, মাছ মারা যাবে না। সবমিলিয়ে টোটাল চিংড়ির ভ্যালু চেইনে আমরা সিরিয়াসলি কন্ট্রিবিউট শুরু করেছি। যার কারণে দেখা যাবে আমরা ভাল চিংড়ি মাছ উৎপাদন করতে পারব এবং ইল্ড ভাল হবো।

আর আমরা রাজশাহীতেও একটা বিশাল ফ্যাক্টরি করেছি, যেখানে আমরা চিংড়ি মাছের খাবার উৎপাদন করতে পারি। এখান থেকে আমরা খাবার সরবাহ করা শুরু করেছি। সবমিলে দাড়াচ্ছে যে, টোটাল চিংড়ির ভ্যালু চেইনে আমাদের সংশ্লিষ্টতা ও ভূমিকা আছে। একদিকে উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকের ইনকাম বাড়াচ্ছি, উন্নত বাচ্চা দিয়ে তাদের মর্টালিটি কমিয়ে তাদের ইনকাম বাড়ছে। আরেকদিকে যেখানে প্রসেস হওয়া দরকার একবারে যেখানে চিংড়ি মাছ উৎপাদন হচ্ছে সেখানে প্রসেস করছি এবং এইটা সরাসরি এক্সপোর্ট করে দিচ্ছি ভাল একজন কাস্টমারের কাছে। সুতারং ভাল ও সেরা সবকিছু নিয়েই সামগ্রীকভাবে চিংড়ি উৎপাদনের সকল প্রক্রিয়ায় আমরা ভুমিকা রাখছি।

আর আমাদের চিংড়ি মাছের ব্রান্ডের নাম দিয়েছি, ‘আমিয়ান শ্রিম্প’। আমিয়ান হচ্ছে সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটা গ্রাম। এই গ্রামে কোনো পাকা ঘরবাড়ি নেই। এই গ্রামের নামেই আমরা ব্রান্ডয়ের নাম দিয়েছি ‘আমিয়ান’। ওখানকার লোকজন যাতে মনে করে, এই চিংড়ি তো আমাদের, এই কারখানা তো আমাদের, এই চিংড়ি আমেরিকাতে যাবে এবং আমাদের গ্রামের নামে বিক্রি হবে। তারা নিজের মনে করবে ফ্যাক্টরিটাকে। আমরা প্রোডিউসারদেরকে পুরাপুরিভাবে নিয়োজিত করে ফেলেছি। যার কারণে আমি মনে করি, এটার একটা সাসটেইনেবল গ্রোথ হবে, আমরা ভাল করতে পারব।

দুতাবাসগুলো কিভাবে রফতানিতে ভুমিকা রাখতে পারে : এতদিন আমরা আমাদের দুতাবাসগুলোকে চিংড়ি মাছ প্রমোশনের জন্য যেভাবে ব্যবহার করেছি বা কাজে লাগিয়েছি, আমরা তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে দিধাদ্বন্দের মধ্যে রেখেছি। আমরা সেখানে যে চিংড়ি মাছ পাঠাই তাতে কখনো ভাল চিংড়ি হয়, আবার কখনো খারাপ চিংড়ি হয়। কখনো কন্টেইনার ফেরত আসে, কখনো কাটা, লোহা পাওয়া যায়, এরকম চলতো। হয়তো অনেক ক্ষেত্রে এগুলো রিউমার বা গুজব। এগুলো ঠিক নয়। আমাদেরকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে যে, বাগদা চিংড়িটা আসলে কি এবং এটাকে কিভাবে উৎপাদন করা হয়, কিভাবে প্রোসেস করা হয়, এর মার্কেট কি আছে। এসব বিষয়ে দুতাবাসগুলোকে ভালোভাবে যদি ট্রেইন বা উদ্বুদ্ধ করা যায়, চিংড়ির কাস্টমারদেরকে খুজে বের করা যায়, তাহলে দুতাবাসগুলো ওই পার্টিকুলার কাস্টমারদের সাথে আমাদের লিংক করিয়ে দিতে পারে। এই কাজটা আমাদের দুতাবাসগুলো খুব ভালভাবেই করতে পারে।

গত বছর আমি বেলজিয়ামের চিংড়ি মাছের সী-ফিস ফেয়ারে গিয়েছিলাম। আমি দেখলাম ওখানে আমাদের দুতাবাসের যে সমস্ত কমার্শিয়াল এটাসি আছেন, ইকনোমিক কাউন্সিলর আছেন তাদের প্রচন্ড ইন্টারেস্ট আছে, তারা অনেক ভাল কিছু করতে চায়। তারা অনেক সার্পোট দিতে চায় এবং তারা মনে করে যেখানে কনফিডেন্স আছে সেখানে তাদের সাথে কাজ করতে চায়। এরকম ইন্টারেস্ট অনেক জায়গায় আছে, আমাদের দেশের দুতাবাসগুলোতে যারা কাজ করেন তারা প্রচন্ড দেশপ্রেমীক। আমার মনে হয়, তাদের কাছে যদি ঠিক মতো বিষয়গুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে এখাতের উন্নয়ন হবে।

ভর্তুকি ও লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ : একটা প্রশ্ন থেকে যায়, চিংড়ি মাছ এক্সপোর্ট করে আমাদের দেশের কি লাভ হচ্ছে? আমি মনে করি, দেশের একটা উৎপাদিত কাঁচামাল আমরা রফতানি করছি। এখানে কর্মসংস্থান হচ্ছে। মাটি আছে, পানি আছে এগুলোর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে। জিডিবি’র প্রবৃদ্ধিতে সত্যিকারের ভূমিকা রাখছে।

এক্ষেত্রে আমি মনে করি, এখন চিংড়ি মাছের উপর যে আমাদের ভর্তুকি দেওয়া হয় ৮শতাংশ, সেটা বাড়িয়ে দিয়ে একটা টার্গেট নেওয়া উচিত। ২০১২-১৩ সালে এই খাতে আমাদের ৫ হাজার কোটি টাকা রফতানি আয় ছিল। এটা এখন কমে এসেছে ৪ হাজার কোটিতে। এই প্রবণতা যেহেতু ভাল না, এটাকে ভাল করতে হলে আগামী পাঁচ বছরে এখাত থেকে দশ হাজার কোটি রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমাদেরকে এগুতে হবে। সেক্ষেত্রে এই ভর্তুকি প্রথম বছর ৮ শতাংশের বদলে ২০ শতাংশ দেওয়া উচিত। পরের বছর ১৮ শতাংশ, পরের বছর ১৬ শতাংশ, পরের বছর ১৪ শতাংশ এবং তার পরের বছরে ১২ শতাংশে এনে, এভাবে ধাপে ধাপে শেষ করা উচিত। খুব বেশি যে আমাদের টাকা নষ্ট হবে তা নয়, অল্প টাকা যাবে। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা দাঁড়িয়ে যাবে। তাহলে বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি কিন্তু সারা পৃথিবীতে ডোমিনেট করবে এবং অনেক ভাল কিছু করা সম্ভব হবে।

সরকারের করনীয় : বিদেশে আমাদের দুতাবাসগুলোতে যারা আছেন, তারা যখন ঢাকাতে বা কোথাও একসাথে মিলিত হয়, কিংবা একত্রিত হন অথবা বিদেশি মিশনগুলোতে আমাদের বিজনেস রিপ্রেজেন্টেটিভ পাঠিয়ে, আমাদের দেশে কি ধরনের চিংড়ি উৎপাদন হচ্ছে বা বাগদা চিংড়ি কি, এর মার্কেটটা কোথায় আছে, টার্গেট গ্রু প কারা এবং কিভাবে এটাকে উপস্থাপন করতে হবে, এসব বিষয়ে তাদেরকে একটা ব্রিফিং দেয়া দরকার। সরকার সাপোর্ট দিলে এটা করা সম্ভব।

একইসঙ্গে, পরবর্তী পাঁচ বছরে আমরা ১০ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি করব, সে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা দরকার। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ভর্তুকিও সরকারকে দিতে হবে।

যারা চিংড়ি চাষি রয়েছেন, তাদেরকে সঠিক ও যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। সেক্ষেত্রে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর সাথে সরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে চাষিদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে ভাল হবে।

ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী
এসিআই এগ্রিবিজনেস